খাগড়াছড়িতে সেনা অভিযানে মগ লিবারেশন পার্টির সাথে গুলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পালাতে গিয়ে তিনতলা বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দিলে কংচাইঞো মারমা (৩১) নামে মগ লিবারেশন পার্টি’র এক কমান্ডারের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলা সদরের শান্তিনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মৃত কংচাইঞো মারমা মহালছড়ির অংসাজাই মারমার ছেলে বলে জানা গেছে। তিনি পরিবার নিয়ে শান্তিনগরের ওই বাড়িতে ভাড়ায় থাকতেন। এদিকে তিনি আঞ্চলিক সংগঠন মগ লিবারেশন পার্টির একজন সশস্ত্র কমান্ডার বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খাগড়াছড়িতে অভিযান পরিচালনা করে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি করে কংচাইঞো মারমা। একপর্যায়ে তিনি পালানোর জন্য তিনতলার ছাদ থেকে লাফ দেয়। পরে তাকে আহত অবস্থায় সেনাবাহিনী উদ্ধার করে।
এদিকে ভাগনীর মৃত্যুর কারণে গতকাল রাত থেকে তারা কেউ বাড়িতে ছিলেন না উল্লেখ করে তিনতলা ভবনটির মালিক সুজিত দে জানান, ‘খবর পেয়ে বাসায় এসে দেখতে পাই ভাড়াটিয়ার বাসায় সব এলোমেলো হয়ে আছে। দেড় বছর ধরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে কংচাইঞো মারমা এখানে ভাড়া থাকেন। ভাড়া নেয়ার সময় তিনি বিএসআরএম কোম্পানিতে চাকরি করেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। স্ত্রী সন্তান নিয়মিত বাসায় থাকলেও তিনি মাঝে মধ্যে আসতেন।’
খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক দিপা ত্রিপুরা জানান, ‘সকাল ১০টার পর সেনাবাহিনী একজনকে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। পড়ে যাওয়ায় তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তে জানা যাবে।
খাগড়াছড়ি সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা বলেন, হাসপাতাল থেকে বিষয়টি জানানোর পর পুলিশ সুরতহাল করছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
এদিকে বিকেলে সেনাবাহিনীর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে সিন্দুকছড়ি জোনের নেতৃত্বে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার গাড়িটানা এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে একজন স্থানীয় সন্ত্রাসী ইসমাইল হোসেনকে ২টি এলজি ও ৫ রাউন্ড কার্তুজসহ গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তীতে সময়ে গ্রেফতার ইসমাইল হোসেনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে খাগড়াছড়ি জেলার শান্তিনগর এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী কংচাই মারমাকে আটক করার জন্য আরেকটি অভিযান পরিচালিত হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে কংচাই মারমা একটি তিনতলা ভবনের ছাদ থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে ১ রাউন্ড গুলি ছোড়ে এবং পালানোর কোনো পথ না পেয়ে একপর্যায়ে ছাদ থেকে লাফ দেয়। পরে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত কাছের হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ধারণা করা হয়, ছাদ থেকে লাফ দেয়ার ফলে তার মৃত্যু হয়েছে।
এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি ৯ মিলিমিটার পিস্তল, ৫টি এলজি, ২১টি কার্টুজ ও ১৮টি পিস্তলের গুলি উদ্ধার করা হয় এবং বর্তমানে লাশ ময়নাতদন্ত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এতে আরো বলা হয়, কংচাই মারমা দীর্ঘদিন ধরে খাগড়াছড়ি এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিল। তার বিরুদ্ধে একাধিক অপহরণের অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং সন্ত্রাস দমনে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।