চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের দুর্গম জঙ্গল ছলিমপুর পাহাড়ি এলাকা দখল নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে গত দুই দিন ধরে চলা সংঘর্ষে কালু মিয়া (৩২) নামে একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এসময় উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে।
রোববার (৫ অক্টোবর) সকালে এ ঘটনার নিউজ কাভার করতে গেলে এখন টেলিভিশনের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান হুসাইন জিয়াদ ও ক্যামরাম্যানকে কুপিয়ে আহত করা হয়। স্থানীয়রা এ ঘটনার জন্য রোকন মেম্বার ও ইয়াছিন বাহিনীকে দায়ি করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আলিনগর এলাকাটি মো: ইয়াছিন বাহিনীর লোকজনের দখলে ছিল। শনিবার ভোরে রুকন মেম্বার ও গোলাম গফুরের নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক অস্ত্রধারী ওই এলাকা দখল করতে যায়। এ সময় ইয়াছিনের বাহিনীর সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সংঘর্ষ চলাকালে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। এতে অন্তত ২৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে রোকন গ্রুপের এক সদস্যকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
তবে পুলিশের তথ্যমতে সেখানে গুলিবিদ্ধ ১৩ জন হলেন– জাবেদ (৩৮), জাকির (৪৮), তানভীর (২৩), সিরাজুল ইসলাম (৪৩), ফজলুল করিম, ইসমাইল হোসেন বাবু (৩০), জাহিদুল ইসলাম (১৯), সৌরভ বড়ুয়া (১৭), মো: পারভেজ (২০), নুরুল আলম (৪০), শুক্কুর আলম (২২), রায়হান (১৮) ও শামীম (২৯)। তবে তাদের মধ্যে কে কোন বাহিনীর সদস্য সেই তথ্য কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।
এ বিষয়ে উত্তর জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রোকন গ্রুপের প্রধান রোকন মেম্বার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভূমিদস্যু ইয়াছিনের লোকজন ছিন্নমূল এলাকা থেকে ১৫ জন বাসিন্দাকে ধরে নিয়ে বেদম মারধর করে। এতে একজন নিহত হয়েছেন। তবে এই ঘটনায় তিনি জড়িত নন।’
রোকনের ভাষ্য, ‘যারা হামলার শিকার হয়েছেন, তারা বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত, এটা ঠিক।’
এদিকে এখন টেলিভিশনের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান হুসাইন জিয়াদ সংঘর্ষের ঘটনায় তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে একদল সন্ত্রাসী জিয়াদ ও তার ক্যামেরা পারসনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সোহেল রানা বলেন, ‘পাল্টা আক্রমণে ১৫ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে দেশে তৈরি একটি এলজি, আটটি শটগানের গুলি, ২টি পিস্তল, ম্যাগজিন, ১টি চাপাতি, ১টি লোহার হাতুড়ি ও পিস্তলের ৩টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো তারা কোনো পক্ষের অভিযোগ পাননি। তারা অভিযোগ দিলে মামলা নথিভুক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুণ্ড সার্কেল) লাবিব আবদুল্লাহ বলেন, ‘দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন মারা গেছেন। গুলিবিদ্ধ ১৩ জনের নাম নিশ্চিত হওয়া গেছে।’
সীতাকুণ্ড মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশি ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’