রাউজান বিএনপি নেতা হাকিম হত্যাকাণ্ডের রহস্যের জট খুলেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ ও স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এ পর্যন্ত পুলিশের তৎপরতায় ছয়জন আসামি গ্রেফতার হয়েছে এবং হাকিম হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডসহ বাকি আসামিদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আবদুল হাকিম হত্যাকাণ্ড নিয়ে আয়োজিত প্রেসব্রিফিংয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মো: সাইফুল ইসলাম সানতু এসব তথ্য জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী মডেল থানাধীন মদুনাঘাট এলাকায় গত ৭ অক্টোবর সংঘটিত ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারের দিক-নির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও সহযোগীদের শনাক্ত এবং গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এতে বলা হয়, ঘটনার দিন সকালে নিহত হাকিম নিজ প্রাইভেটকারযোগে হামিম অ্যাগ্রো ফার্মে যান। বিকেলে চট্টগ্রাম শহরে ফেরার পথে মদুনাঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশে পৌঁছালে মোটরসাইকেলযোগে আসা অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা তার গাড়ির সামনে এসে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করেন।
ঘটনার পর জেলা গোয়েন্দা শাখা ও হাটহাজারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৩১ অক্টোবর রাউজান থানার বাগোয়ান ইউনিয়নের গরীব উল্লাহ পাড়া এলাকা থেকে মো: আব্দুল্লাহ খোকনকে (প্রকাশ ল্যাংড়া খোকন) গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে এবং পরবর্তীতে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
খোকনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২ নভেম্বর রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত মো: মারুফকে গ্রেফতার করা হয়। মারুফের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রের অবস্থান জানা যায়, যা মো: সাকলাইন হোসেনের হেফাজতে ছিল।
পরবর্তীতে ৪ নভেম্বর রাতে হাটহাজারী থানার একটি বিশেষ টিম রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো: সাকলাইন হোসেনকে গ্রেফতার করে। তার হেফাজত থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একনলা বন্দুক, একটি এলজি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে মারুফ, জিয়া ও সাকলাইনের দেয়া তথ্যমতে ৯ নভেম্বর রোববার রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া চৌধুরীহাটের আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়িতে জেলা পুলিশ অভিযান চালায়।
ওই অভিযানে হাকিম হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ৪টি বিদেশি পিস্তল, ১টি রিভলভার, ১টি চাইনিজ রাইফেল, ১টি শট গান, ৪৯ রাউন্ড রাইফেলের গুলি(৭.৬২এমএম), ১৭ রাউন্ড শর্টগানের কার্তুজ, ১৯ রাউন্ড পিস্তলের গুলি(৭.৬৫এমএম), ৭টি ম্যাগজিন, ২টি দেশীয় রামদা, ১টি রকেট ফ্লেয়ার, ৫০পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২৫০ গ্রাম গাঁজা (আনুমানিক) এবং ৯৬ হাজার নগদ টাকাসহ ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
আসামিদের জবানবন্দি ও স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, রাউজান থানাধীন বালুমহলের নিয়ন্ত্রণ ও স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
এ পর্যন্ত পুলিশের তৎপরতায় মোট ছয়জন আসামি গ্রেফতার হয়েছে এবং হাকিম হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডসহ বাকি আসামিদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।
গ্রেফতার আসামিরা হলেন- মো: আব্দুল্লাহ খোকন প্রকাশ লেংড়া খোকন, মো: মারুফ, জিয়াউর রহমান, মো: সাকলাইন হোসেন, মো: সাকিব ও শাহেদ।
আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে নোয়াপাড়া, চৌধুরীহাট ও আশপাশের এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন, পুলিশি টহল, বিশেষ অভিযান এবং রাত্রিকালীন সাঁড়াশি তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলেও সাংবাদিকদের জানানো হয়।



