ভয়াবহ ভূমিকম্পে সৃষ্টি হওয়া আতঙ্কে টঙ্গীর বিসিক শিল্পাঞ্চলের ফ্যাশন পালস গার্মেন্টসসহ আরো কয়েকটি কারখানা থেকে একযোগে নামতে গিয়ে প্রচণ্ড হুড়োহুড়ির মধ্যে প্রায় তিন শ’ শ্রমিক-কর্মচারী আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনির সময় কারখানাগুলোতে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভূমিকম্প শুরু হতেই শ্রমিকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এদিক সেদিক ছুটোছুটি করতে গিয়ে অনেকেই সিঁড়িতে পড়ে যান। ওই সময় কারখানার জরুরি নিরাপত্তা গেট বন্ধ থাকায় বের হওয়ার সিঁড়িতে প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়। এতে ৯ তলা ভবনের শ্রমিকরা একসাথে নিচে নামতে গিয়ে মানবজটের সৃষ্টি করেন এবং পদদলিত হয়ে অনেকে আহত হন। দ্রুত বের হওয়ার চেষ্টায় একে অপরের ওপর পড়ে বহু শ্রমিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
আহতদের টঙ্গী হাসপাতালে ও আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে নেয়া হয়। টঙ্গী হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইসরাত জাহান এনি বলেন, ‘ভূমিকম্পের পরপরই শতাধিক শ্রমিক চিকিৎসা নিতে আসে। এখনও রোগী আসছে। বেশির ভাগের হাত-পা ও কোমরে আঘাত রয়েছে। একজন শ্রমিককে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল পাঠানো হয়েছে।’
ঘটনার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমে কথা বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, জরুরি গেট বন্ধ থাকা এবং উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির কারণেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিকদের দাবি, ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয়ে দ্রুত বের হওয়ার সুস্পষ্ট পথ ও নির্দেশনা না থাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেয়।
এদিকে ভূমিকম্পে টঙ্গীর বিভিন্ন আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্টেশন রোডে ৬ তলা একটি ভবন পাশের ১২ তলা ভবনের ওপর হেলে পড়ায় এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বহু ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে; অনেক ভবনে স্হানচ্যুতি হওয়ায় দরজা-জানালা আটকে গেছে। ভূমিকম্প চলাকালে মানুষজন কান্নাকাটি করতে করতে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন, কেউ কেউ দোয়া দরুদ পড়তে থাকেন। বড় বড় মার্কেট ও ভবন থেকে নামতে গিয়ে অনেকেই আহত হয়েছেন।
এক ভয়াবহ আতঙ্কে টঙ্গীর হাজারো মানুষ দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করে জীবনের নিরাপত্তা খুঁজছিলেন—এভাবেই ভূমিকম্পটি পুরো নগরজুড়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে।



