মুরাদনগর-কাণ্ড

আপত্তিকর ভিডিও ধারণ ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে, মামলা তুলে নিতে চান ভুক্তভোগী

ধর্ষণে অভিযুক্তসহ গ্রেফতার ৫

হাবিবুর রহমান চৌধুরী, কুমিল্লা

Location :

Muradnagar
প্রতীকী ছবি

কুমিল্লার মুরাদনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক নারীর (২৫) বিবস্ত্র যে ভিডিওটি সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, তা ধারণ করা হয়েছে এক ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে। এছাড়া ধর্ষণের অভিযোগে ওই নারী যে মামলাটি করেছেন তা তিনি এখন তুলে নিতে চান।

এদিকে, ওই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ওই ঘটনায় ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ফজর আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার (২৯ জুন) ভোর ৫টায় ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতর করা হয়। অভিযুক্ত ফজর আলী (৩৮) কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামের পুর্বপাড়ার শহীদ মিয়ার ছেলে।

এছাড়া, এ ঘটনায় ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় আরো চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামের অনিক, সুমন, রমজান ও বাবু।

রোববার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান।

পুলিশ সুপার জানান, ‘এ ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে এবং দ্রুত দোষীদের গ্রেফতারের দাবি উঠেছে। এ ঘটনায় ওই ভুক্তভোগী নিজে মুরাদনগর থানায় অভিযুক্ত ফজর আলীকে আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা করেছেন। মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী ওই নারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বী ওই নারী ১৫ দিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বাবার বাড়ির পাশে পূজা হচ্ছিল। পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়েছিলেন। তিনি বাড়িতে একা ছিলেন। আনুমানিক ১০টার দিকে ফজর আলী ওই নারীকে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। এ সময় তিনি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। পরে ওই ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন।’

পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মূল আসামি ফজর আলীকে রোববার ভোর ৫টায় ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার অপরাধে চারজনকে গ্রেফতর করা হয়।

ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে হিন্দু নারীর আপত্তিকর ভিডিও ধারণ

ওই আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালের ঘটনায় যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরকে পর্নোগ্রাফি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

জানা যায়, আটককৃতদের একজন রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী সুমন। তার নেতৃত্বে হিন্দু নারীর আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করা হয়। সুমন কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের অনুসারী বলে জানা যায়।

শনিবার (২৮ জুন) রাতে ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী থানায় মামলা করার পর পুলিশ অভিযানে নামে। ভুক্তভোগী নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

মামলা তুলে নিতে চান ভুক্তভোগী নারী

স্বামী চায় না, তাই মামলা তুলে নিতে চান আলোচিত ধর্ষণ মামলার ভুক্তভোগী নারী। তিনি জানান, ‘আমি মামলা করেছি আর আমি নিজেই মামলা তুলে নিবো। আমাকে কেউ চাপ দেয় নাই, টাকাও দেয় নাই। স্বামী বলছে, সম্মান যা যাওয়ার গেছে, মামলা করে লাভ নেই।’

অভিযুক্ত ফজর আলীর সাথে ভুক্তভোগী নারীর পরিবারের রয়েছে টাকা লেনদেনের সম্পর্ক

ভুক্তভোগী নারী সাংবাদিকদের জানান, তার মা অভিযুক্ত ফজর আলীর কাছ থেকে কিছুদিন আগে ৫০ হাজার টাকা ঋণ চান। টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে অভিযুক্ত ফজর আলীর সাথে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়। ভুক্তভোগী নারীর সাথে অভিযুক্ত ফজর আলীর আগে থেকেই ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়।