ধান গবেষণায় পদোন্নতি প্রক্রিয়া স্থগিত, মানদণ্ড নির্ধারণে নতুন সিদ্ধান্ত

শেষ পর্যন্ত, মহাপরিচালক ড. মো: খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে ফিরে আসছে শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধের নতুন পরিবেশ। বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তারা আশাবাদী তার ন্যায়নিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ প্রশাসনিক উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ব্রি আবারো হয়ে উঠবে দেশের কৃষি গবেষণার আস্থার প্রতীক।

মোহাম্মদ আলী ঝিলন, গাজীপুর

Location :

Gazipur

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে (ব্রি) বিজ্ঞানীদের পদোন্নতি ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিরসনে প্রতিষ্ঠানের ডিজি ও কৃষি মন্ত্রণালয় কয়েকটি নীতিগত ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বর্তমান পদোন্নতি প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতা, গাবেষণার ধারাবাহিকতা, প্রশাসনিক বিভাজন রোধে ও পদোন্নতির দ্বন্দ্ব নিরসনের মতো সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত একটি সভায় সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠানের ডিজি ড. মো: খালেকুজ্জামানের পদেক্ষেপে এ সমস্যা একটি স্থায়ী সমাধনের দিকে রূপ নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরা এ বিষয়েটিকে ইতিবাচক হিসেবে মেনে নিয়েছেন।

জানা গেছে, ধান গবেষণায় দীর্ঘদিন যাবৎ প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার (পিএসও) পদে পদোন্নতি নিয়ে জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ বিজ্ঞানীদের মধ্যে অস্থিরতা চলে আসছিল। অভিযোগ ছিল, রাজনৈতিক প্রভাব ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রমোশন তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, যার ফলে ইনস্টিটিউটের গবেষণার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছিল। এ ঘটনাকে ঘিরে নানা মহল প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা তৈরি করতে সচেষ্ট ছিল। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল ২টা ৩০ মিনিটে ব্রি মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটি-১ (ডিপিসি)-এর সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পদোন্নতি প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রেখে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ক্লিয়ারেন্স ছাড়া ভবিষ্যতে কোনো প্রমোশন দেয়া যাবে না। একইসাথে দলীয় আনুগত্য, প্রশাসনিক প্রভাব বা ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়োগ ও পদোন্নতি বিষয়ে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। গবেষণায় অবদান, কর্মদক্ষতা, সততা ও শৃঙ্খলাবোধ হবে প্রমোশনের মূল মানদণ্ড। সম্প্রতি পদোন্নতি ঘিরে যেসব বদলি করা হয়েছিল, সেগুলোও বাতিল করা হয়।

প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ড. খালেকুজ্জামান বলেন, ধান গবেষণার মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে কোনো ধরনের দলীয় বা ব্যক্তিগত প্রভাবের বাইরে রাখাই এখন সবচেয়ে জরুরি। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের পদোন্নতি হবে যোগ্যতা, কাজের মান এবং শৃঙ্খলার ভিত্তিতে। সবাইকে বলব, পত্রিকায় লেখালেখি না করে সরাসরি আমার কাছে আসুন আমি ন্যায়সঙ্গতভাবে শুনব এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেব।

তিনি আরো বলেন, আমরা এমন একটি প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে চাই, যেখানে গবেষণা ও দক্ষতা হবে অগ্রাধিকার। দল-মত নির্বিশেষে সবাই যেন সম্মান ও নিরাপত্তার মধ্যে কাজ করতে পারে, সেটাই আমার লক্ষ্য। আমি চাই, ব্রি হোক একটি মডেল ইনস্টিটিউট যেখানে রাজনীতি নয়, গবেষণাই হবে মূল চালিকাশক্তি।

ব্রি’র বিভিন্ন পর্যায়ের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তারা মহাপরিচালকের এই বক্তব্যকে সাহসী, বাস্তবসম্মত ও ন্যায়নিষ্ঠ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাদের মতে, তিনি যে স্বচ্ছ ও নিয়মভিত্তিক প্রশাসনের কথা বলেছেন, তা বাস্তবায়িত হলে ইনস্টিটিউটে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা ও অবিশ্বাসের অবসান ঘটবে।

একজন জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলেন, দুদক ক্লিয়ারেন্স বাধ্যতামূলক করায় পদোন্নতি নিয়ে রাজনীতি বা প্রভাবের সুযোগ থাকবে না। মহাপরিচালক যদি এই নীতি অনুসারে কাজ চালিয়ে যান, তাহলে ব্রি আবারো তার পুরোনো গবেষণা-গৌরব ফিরে পাবে।

অন্যদিকে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে প্রমোশন ও বদলি সংক্রান্ত প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে যেসব নতুন নীতিমালা গৃহীত হয়েছে, তা ইতোমধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে প্রভাবের ভিত্তিতে নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন এই নীতিকে কেন্দ্র করে বিজ্ঞানীরা নতুন করে আস্থা ফিরে পাচ্ছেন।

তবে অনেকেই মনে করছেন, এর ফলে ব্রির প্রশাসনিক কাঠামো আরো মন্ত্রণালয় নির্ভর হয়ে পড়বে। যদিও বেশিরভাগ কর্মকর্তা ও গবেষকই মনে করছেন, স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী।

শেষ পর্যন্ত, মহাপরিচালক ড. মো: খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে ফিরে আসছে শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধের নতুন পরিবেশ। বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তারা আশাবাদী তার ন্যায়নিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ প্রশাসনিক উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ব্রি আবারো হয়ে উঠবে দেশের কৃষি গবেষণার আস্থার প্রতীক।