ছোট্ট মেয়ে মনিষা। বুঝতে শিখেছে কেবল। বিকেল হলেই খেলতে বের হয়ে যায় সহপাঠীদের সাথে। একপর্যায়ে পরিচিত হয় প্রতিবেশী মুসলিম কিছু শিশু বন্ধুর সাথে। এদিকে খেলার ফাঁকে ফাঁকে তাদের কাছ থেকে শুনে শুনেই মনিষার মুখস্থ হয়ে যায় কালেমাসহ একাধিক সূরা। পরে রাতে সেগুলো বাবা-মাকে শোনাত সে। একসময় সূরা শুনে অন্যরকম অনুভূতি জন্মায় বাবা শ্যামলের। পরে ইসলাম নিয়ে তৈরি হয় নানা আগ্রহ। একপর্যায়ে মুসলিম হওয়ার ইচ্ছে জন্মায় মনের অজান্তেই। অবশেষে তিন সন্তানসহ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন শ্যামল ও সোনালী দেবী দম্পতি।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি সাইয়েদ রাশীদুল হাসান জাহাঙ্গীর গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তাদের কালেমা পাঠ করান।
এর আগে মঙ্গলবার কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ইয়াসমিনের আদালতে ধর্ম পরিবর্তন সংক্রান্ত হলফনামা করেন তারা।
বর্তমানে শ্যামলের নাম মো: আবিদ উল্লাহ, স্ত্রী সোনালী দেবীর নাম আরোহী জান্নাত, মেয়ে মনিষার নাম তাসনিম জান্নাত, তিশার নাম আরিশা জান্নাত ও ছেলে আয়ুস্মানের নাম মোহাম্মদ আনাস রাখা হয়েছে।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের বাসিন্দা শ্যামল-সোনালী দম্পতি প্রায় ১০ বছর ধরে চৌদ্দগ্রাম বাজারস্থ জামে মসজিদ রোড এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। বাসার পাশেই রয়েছে শ্যামলের সেলুন দোকান। ৯ বছর আগে তাদের দাম্পত্য জীবনে মেয়ে মনিষা জন্ম নেয়। বয়স যখন ৩-৪; তখন থেকেই পাশের মক্তব, মসজিদ ও মাদরাসায় পড়ুয়া ছোট ছেলে-মেয়েদের সাথে মিশে মনিষা। তাদের সাথে খেলাধুলার একপর্যায়ে শুনতে শুনতে কালেমাসহ একাধিক সূরা মুখস্থ হয়ে যায় তার। মনিষা প্রায় রাতের বেলায় বাবা শ্যামল ও মা সোনালীকে কোরআনের সেসব সূরা পড়ে শুনাত। সূরা শুনতে শুনতে ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয় শ্যামল-সোনালী দম্পতি।
এদিকে গত দুই বছর আগে শ্যামল সেলুন দোকানের কাস্টমার কয়েকজন তরুণ ব্যবসায়ীর সাথে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বিষয়ে আলাপ করেন। তারা শ্যামলকে আরো বুঝতে সময় নেয়ার পরামর্শ দেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার কুমিল্লার আদালতে গিয়ে শ্যামল-সোনালী দম্পতি সনাতনী হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করেন। পরে বৃহস্পতিবার রাতে তিন সন্তানসহ কালেমা পাঠের মাধ্যমে শরিয়া মোতাবেক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তারা।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক মো: আকতারুজ্জামান, এমরান হোসেন বাপ্পি, তরুণ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ বেলাল হোসেন ইয়াছিন, আরিফুর রহমান, মাহফুজুর রহমান, মো: ইলিয়াছসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বিষয়ে আবিদ উল্লাহ বলেন, ‘ছোট শিশুদের সাথে চলাফেরা করার সময় আল্লাহর রহমতে বড় মেয়ে কোরআনের কয়েকটি সূরা মুখস্থ করে। মেয়ের মুখে কোরআনের তেলাওয়াত শুনে হৃদয়ে অন্যরকম অনুভূতি হয়। সেজন্য পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেছি। আমি যেন হজরত মোহাম্মদ (স:)-এর আদর্শ অনুযায়ী আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায় করতে পারি, সেজন্য সবার দোয়া কামনা করছি।’
এ বিষয়ে নও মুসলিম পরিবারকে কালিমা পড়ানো উপজেলা ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি সাইয়েদ রাশীদুল হাসান জাহাঙ্গীর বলেন, ‘কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ইয়াসমিনের আদালতে ধর্ম পরিবর্তন সংক্রান্ত হলফনামার কপি নিয়ে স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী শ্যামল-সোনালী দম্পতি তাদের তিন সন্তানসহ আমার কাছে কালিমা পাঠ করতে আসে। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীকে সাথে আসে। ইসলামের প্রতি তাদের আগ্রহ থাকায় ও যথাযথ আইনিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় আমি তাদের কালিমা পাঠ করিয়েছি।’
চৌদ্দগ্রাম পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: জামাল হোসেন বলেন, ‘একটি দৈনিকের মাধ্যমে জানতে পারি চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় বসবাসরত সনাতন ধর্মাবলম্বী এক পরিবারের তিন শিশু সন্তান ও বাবা-মা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। প্রতিটি মানুষেরই ব্যক্তিগত এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে। কাজেই তারা যদি স্বেচ্ছায়, স্বপ্রণোদিতভাবে ও বিনা প্ররোচনায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে থাকে আমি তাদের এমন ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।‘