নির্বাচিত সরকার না হলে বাংলাদেশে দেশী-বিদেশী কেউ বিনিয়োগ করবে না। সবাই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছে নির্বাচনের অপেক্ষায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি কলেন, অনির্বাচিত সরকারের উপস্থিতিতে আমরা একেকদিন সময় নষ্ট করছি ও পিছিয়ে যাচ্ছি। যেখানেই যাই ব্যবসায়ীরা বলছেন- খসরু ভাই। একটা নির্বাচিত সরকার দিয়ে আমাদের একটু মুক্ত করে দেন।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে চেম্বার মিলনায়তনে রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত রংপুর বিভাগের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নের রাজনৈতিক অঙ্গীকার শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু বলেন, ‘বিদেশ থেকে যারা আসেন। তারা সব কিছু শোনেন। ঠিক আছে বলেন। তারপর বলেন, আপনাদের নির্বাচনটা কবে? কারণ, তারা ইন্টিরিম সরকারের সাথে কোনো কমিটমেন্টে আসতে চান না। যেহেতু তারা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করতে চান। এটা অন্তবর্তী সরকারের কোনো কাজ না। সবাই অপেক্ষা করছে নির্বাচিত সরকারের জন্য।
তিনি বলেন, আমরা একেকটা দিন নষ্ট করছি, অনির্বাচিত সরকারের উপস্থিতিতে। এতে একেক দিন আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছি। অর্থনৈতিকভাব পিছিয়ে যাচ্ছি। সামাজিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছি। পদে পদে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। একেকটা দিন আমরা নিম্নগতির দিকে যাচ্ছি। এজন্য আপনাদেরকে (ব্যবসায়ীদেরকে) শক্তিশালীভাবে আওয়াজ তুলতে হবে নির্বাচিত সরকারের জন্য। যারা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। এর বাইরের সরকারের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নাই। কোনো জবাবদিহিতা নাই।
খসরু বলেন, সরকার এবং জনগণের মাঝে সেতুবন্ধন হচ্ছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। তারা আজকে নাই। যে কারণে কেউ কাজ করছে না। পুলিশ কাজ করছে না। সরকারি কর্মকর্তারা কাজ করছে না। কোনো জায়গায় কোনো সিদ্বান্ত দেয়া-নেয়া হচ্ছে না। হবেও না। এজন্য আমি ইন্টিরিম সরকারকে দোষারোপ করছি না। কারণ, এটা তাদের কাজ না। আমি চাই বাংলাদেশে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। জনগণের মালিকানার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। যার জন্য গত ১৭ বছর যুদ্ধ করেছি।
তিনি বলেন, সংস্কার বলেন, পরিবর্তন বলেন, চার্টার বলেন, সবগুলোই বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন নিয়ে করতে হবে। কোনো বিশেষ দল, বিশেষ গোষ্ঠীর চিন্তার মাধ্যমে পরিবর্তন আসে না। যদি আসে তাহলে সেই পরিবর্তন শুধু তাদের জন্য আসে। বাংলাদেশের মানুষের জন্য আসে না। আমার ঢাকায় কিছু লোক বসে যদি ভাবি বাংলাদেশের মানুষের সিদ্ধান্ত দিয়ে দেবো। সেটা গণতন্ত্র নয়। সেটা গণতন্ত্র বিরোধী কাজ। গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করতে হলে জনগণের নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে হবে। তাহলে সেটা সাসটেইনএবল হবে।
খসরু বলেন, ‘আমি যেখানে যাই। সেখানেই ব্যবসায়ীরা বলেন, খসরু ভাই। আমাদের একটা নির্বাচিত সরকার দিয়ে একটু মুক্ত করে দেন। আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চাই। আমরা কাজ করতে চাই। আমরা বিনিয়োগ করতে চাই। আল্লাহর ওয়াস্তে একটা নির্বাচন দিয়ে সরকার দেন। তাদের সাথে কাজ করি।’
চেম্বার সভাপতি এমদাদুল হকের সভাপতিত্বে এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, মহানগর বিএনপির সভাপতি সামসুজ্জামান সামু, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মাহফুজ উন নবী ডন, সাবেক জেলা বিএনপি সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা, রংপুর উইমেন চেম্বার সভাপতি শাহীন আখতার, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল ইসলাম পটুসহ রংপুর বিভাগের আটজেলার চেম্বার নেতৃবৃন্দ।
এ সময় তারা রংপুর বিভাগের অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ে কথা বলেন। সেগুলো পূরণে নীতিনির্ধারণী ঐকমত্য দাবি করেন।