মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে নিখোঁজ হওয়ার এক দিন পর রেললাইনের পাশ থেকে ইকবাল হোসেন (৩০) নামে এক যুবকের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে রেলওয়ে পুলিশ।
রোববার (২৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের কাছেই রেলগেটের পাশ থেকে খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গতকাল শনিবার বিকেল থেকে নিহত ইকবাল নিখোঁজ ছিলেন। নিহত ইকবাল হোসেন উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের বরচেগ গ্রামের ইলিয়াস মিয়ার ছেলে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোববার সকালে উপজেলা পরিষদের কাছেই রেলগেটের পাশে স্থানীয়রা খণ্ডিত লাশ দেখতে পান। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে ইকবালের পরিবার এসে লাশটি শনাক্ত করেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক সরকারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল নিহতের হাত-পা বিচ্ছিন্ন লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠায়।
নিহত ইকবালের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার ইকবাল কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ভেড়াছড়া গ্রামের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যায়। শ্বশুর বাড়ির লোকজন বলছে সেখান থেকে পরদিন শনিবার বিকেলে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। প্রথমে মোবাইলে কল গেলেও পরে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। ইকবালের সন্ধান চেয়ে ছবিসহ অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে। এছাড়া শ্বশুর ও ইকবালের বাবা কমলগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ইকবালের লাশ পাওয়ার পর উভয় পরিবারের লোকজন ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যা বলে অভিযোগ করছেন। উদ্ধার করা লাশের চেহারা এবং জিডি করা নিখোঁজ ইকবালের ছবির সাথে মিল পাওয়া গেছে।
নিহত ইকবালের স্ত্রী রিমা (২৫) বলেন, ‘আমার স্বামী স্বাভাবিকভাবে শনিবার আমাদের বাড়ি থেকে তার বাড়ির উদ্দেশে বের হয়েছেন। আমাদের বিয়ের মাত্র ছয় মাস হয়েছে। এখন তিন মাসের বাচ্চা আমার পেটে। স্বামীর সাথে আমার কোনো ধরনের মনোমালিন্য হয়নি। আমরা শুধু স্বামী-স্ত্রী ছিলাম না, ভালো বন্ধুও ছিলাম।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্বামী ট্রেনের নিচে পড়ে নিহত হতে পারে না। এটা পরিকল্পিত হত্যা। আমি স্বামী হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
নিহত ইকবালের বাবা মো: ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই। সঠিক তদন্তের মধ্যে যেন তা বের হয়ে আসে।’
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর রোববার সকালে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘গতকাল শনিবার নিহত ইকবালের বাবা ও তার শ্বশুর থানায় এসে জিডি করে গেছেন। তবে এ ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি।’
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার বলেন, ‘আমরা রেললাইন থেকে লাশ উদ্ধার করেছি। লাশের হাত-পাসহ পুরো শরীর ছিন্নভিন্ন অবস্থায় রয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এটি পরিকল্পিত হত্যা নাকি আত্মহত্যা সেটি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে।