নবীগঞ্জে গ্রেফতার এড়াতে পুরুষশূন্য গ্রাম, বন্ধ দোকানপাট

যৌথ অভিযানের পর থেকেই দক্ষিণ গজনাইপুর ও আশপাশের গ্রামগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

কিবরিয়া চৌধুরী, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ)

Location :

Nabiganj
নবীগঞ্জ থানা
নবীগঞ্জ থানা |সংগৃহীত

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গজনাইপুর গ্রামে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ সাঁড়াশি অভিযানের পর থেকে এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। আতঙ্কে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

গত সোমবার (৩০ জুন) বিকেলে জনতার বাজার ও দক্ষিণ গজনাইপুর গ্রামে সরেজমিনে দেখা গেছে, কোথাও মানুষের আনাগোনা নেই। দোকানপাট সম্পূর্ণ বন্ধ। ব্যবসায়ীরা ভয়ে বাজারমুখো হননি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার (২৯ জুন) দুপুর থেকে দক্ষিণ গজনাইপুরের বেশিভাগ পুরুষ সদস্য গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। কেউ কেউ গরু-ছাগল নিয়ে পরিবারসহ এলাকা ত্যাগ করেন। অনেক নারী, কিশোর, যুবক এবং বৃদ্ধও নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে আশপাশের গ্রামে চলে গেছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে জনতার বাজার পশুর হাটে এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপর হামলার ঘটনায় ১ জুন নবীগঞ্জ থানায় ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এরপর ২৮ জুন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি দক্ষিণ গজনাইপুর গ্রামের নজর উদ্দিনকে গ্রেফতার করতে গেলে পুলিশের উপর পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়।

নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো: কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ নজর উদ্দিনকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। কিন্তু এ সময় স্থানীয় মসজিদে ‘ডাকাত এসেছে’ বলে মাইকিং করা হয়। এতে গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুই শতাধিক মানুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশকে ঘিরে ফেলে, নজর উদ্দিনকে ছিনিয়ে নেয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের একটি ভ্যান ও দু’টি সিএনজি ভাঙচুর হয়। আহত হন তিন পুলিশ কনস্টেবল।

ঘটনার পর ২৮ জুন গোপলার বাজার তদন্ত কেন্দ্রের এসআই শওকত আলী ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন।

পরদিন রোববার (২৯ জুন) সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ, বানিয়াচং সেনা ক্যাম্পের সেনা সদস্য ও র‌্যাব-৯ এর একটি দল যৌথ অভিযান চালায় দক্ষিণ গজনাইপুর গ্রাম ও জনতার বাজার এলাকায়। অভিযানে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি ইকবাল হোসেনসহ মোট ১৩ জনকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই শেষে আটজনকে গ্রেফতার দেখানো হয় এবং নিরপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় পাঁচজনকে ছেড়ে দেয়া হয়।

নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো: কামরুজ্জামান বলেন, পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিসহ আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে, যৌথ অভিযানের পর থেকেই দক্ষিণ গজনাইপুর ও আশপাশের গ্রামগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্রামের নারীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

স্থানীয়রা জানায়, শুধু অপরাধীরাই নয়, অনেক নিরীহ মানুষও হয়রানির ভয়ে গ্রাম ত্যাগ করছেন।

জনতার বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘কখন কাকে ধরে নিয়ে যায়, বলা যায় না। তাই দোকান খুলি নাই। এলাকাজুড়ে ভয়ের পরিবেশ।’

সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা প্রকৃত অপরাধীদের যেন দ্রুত আইনের আওতায় আনা হয় তবে নিরপরাধ কাউকে যেন হয়রানি না করা হয়। পুলিশের উপর হামলার মতো ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।