চারটি আসন বহালের দাবিতে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির উদ্যোগে বাগেরহাটে বুধ ও বৃহস্পতিবার হরতালে শেষে আবারো ৪ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন এই কর্মসূচিতে রয়েছে। রোববার জেলা ও উপজেলার সকল সরকারি অফিস ও আদালত ঘেরাও ও অবরোধ এবং সোম, মঙ্গল ও বুধবার হরতালের কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। এদিকে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের কারণে বাগেরহাট থেকে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারেনি।
জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সম্মিলিত কমিটির কো কনভেনর এম এ সালাম, সদস্য সচিব শেখ মোহাম্মদ ইউনুস আলী, জেলা জামায়েতের আমির মাওলানা রেজাউল করিম, বিএনপি নেতা মোজাফ্ফর রহমান আলম, সরদার লিয়াকত আলী প্রমূখ নেতৃবৃন্দ কর্মসূচি ঘোষণার সময়ে উপস্থিত ছিলেন।
বাগেরহাটের চারটি আসন বহালের দাবিতে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল সড়কে আগুন জ্বালিয়ে, বেঞ্চ পেতে, বাঁশ বেঁধে ও গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ করছেন হরতালের সমর্থনকারীরা। সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির দাবি, জেলার বিভিন্ন সড়কের অন্তত ১৩৪ টি স্থানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবস্থান নিয়েছেন নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা। যার ফলে বাগেরহাট জেলা কার্যত অন্যান্য জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এমনকি আন্তঃজেলা যোগাযোগ ব্যবস্থাও এক কথায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
এদিকে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড, দড়াটানা সেতুর দুইপাশ, ফতেপুর বাজার, সিএনবি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে পণ্যবাহী ট্রাকের সারি দেখা গেছে। এর ফলে ব্যবসায়ী ও চালকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
অপরদিকে এক শ্রেণির অসাধু চাঁদাবাজ ট্রাক প্রতি দুই শত টাকা আদায় করছে বলে ট্রাক চালকদের কাছ থেকে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে হরতালের সমর্থন করে বাগেরহাট জেলাজুড়ে দোকানপাট খোলেননি ব্যবসায়ীরা। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
গত ৩০ জুলাই দুপুরে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন কমিয়ে জেলায় তিনটি আসন করার প্রাথমিক প্রস্তাব দেয়। এরপর থেকেই বাগেরহাটে আন্দোলন শুরু হয়। চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন বাগেরহাটবাসী। এরপরেও ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন শুধু সীমানা পরিবর্তন করে তিনটি আসন ঠিক রেখে চুড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। নির্বাচন কমিশনের এই আসন বিন্যাস গন মানুষের দাবিকে উপেক্ষা করেছে বলে জানান সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতাকর্মীরা।
চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী, বাগেরহাট-১ ( বাগেরহাট সদর-চিতলমারী-মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (ফকিরহাট-রামপাল-মোংলা) ও বাগেরহাট-৩ (কচুয়া-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)। দেশ স্বাধীনের পর থেকে ৪টি আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। তখনকার সীমানা ছিল বাগেরহাট-১ (চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট), বাগেরহাট-২(বাগেরহাট সদর-কচুয়া), বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)। এই সীমানা ঠিক রাখার দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
এসময় নেতৃবৃন্দ দাবি করেন, ১৯৭১ সাল থেকে বাগেরহাটের জনগণ ৪ আসনে সংসদ নির্বাচন করে আসছে। সেই থেকে তারা বিভিন্ন উপজেলার সাথে মিলিয়ে আসনের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন প্রক্রিয়ায় চারটি আসনকে তিনটি করতে গিয়ে এমন ভাবে কাটাছাটা করে জগাখিচুরি পাকিয়েছে, তা নির্বাচন সীমানা নির্ধারণের আইনের ৬ ধারা পরিপন্থি। যেটার কারণে একদিকে যেমন নির্ধারণ করা উপজেলার মধ্যে সীমানার কোনো মিল নেই। তেমনি যোগাযোগেরও বাঁধা গ্রস্থ হচ্ছে। এতে বাগেরহাটবাসী ক্ষুব্ধ হয়েছে। প্রয়োজনে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার ঘোষণা দেন বিক্ষুদ্ধ নেতৃবৃন্দ।