দীর্ঘ আলোচনা শেষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে দু’টি মেনে নিয়েছে প্রশাসন। ফলে আন্দোলন সাময়িক স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শহীদুল হক এ কথা জানান।
তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের মেনে নেয়া দাবি দু’টি হলো হল ছাড়ার নির্দেশনা প্রত্যাহার এবং এক সপ্তাহের মধ্যে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হবে। তবে যে দাবিতে তারা আন্দোলনে নেমেছিলেন, সেই সমন্বিত বা কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এ বিষয়ে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।
এর আগেমঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা শুরু হয়ে তা শেষ হয় রাত সাড়ে ১১টায়।
সমন্বিত ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার পর ভিসির ক্ষমা চাওয়া ও হামলাকারী বহিরাগতদের গ্রেফতারসহ ছয় দফা দাবির নতুন কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন বাকৃবির শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয় দিনের মতো তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইন অবরোধ করেছিলেন। পরে সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ গিয়ে ব্যাংকের শাখা এবং ট্রেজারি ভবনে তালা দেয়।
এমন প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৪০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সাথে নিঃশর্ত আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কৃষি অনুষদের হল রুমে চলে আলোচনা। একে ভার্চুয়ালি অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এ কে এম ফজলুল হক ভূঁইয়া।
আলোচনা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি এ এইচ এম হিমেল সাংবাদিকদের জানান, সভায় কর্তৃপক্ষের তরফে চলমান আন্দোলনের দাবিগুলোর বিষয়ে আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এরপর তারা বুধবারের কর্মসূচি থেকে সরে আসার কথা বলেছেন। এসব আশ্বাসে বুধবারের আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে আবার কর্মসূচি দেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শহীদুল হক বলেন, ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের হলে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে। বুধবার সিন্ডিকেট মিটিংয়ের মাধ্যমে হল ত্যাগের নির্দেশনা প্রত্যাহার করা হবে।
এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতিও শিক্ষার্থীদের দেয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।
কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়ে তিনি বলেন, আপাতত তিন ডিগ্রি অর্থাৎ অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। আর অন্যান্য বিষয়ে সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হবে।
ভেটেরিনারি অনুষদ এবং পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের প্রায় এক মাস ধরে কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলন চলছিল। দুই অনুষদের ডিগ্রিকে একীভূত করে একটি সমন্বিত ডিগ্রি দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় দুপুর ১টার দিকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে ভিসিসহ প্রায় ২০০ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে আটকে রেখে তালা দেন শিক্ষার্থীরা।পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভিসির বাসভবনের পাশ থেকে ২৫০-৩০০ জন বহিরাগত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে। শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে বহিরাগতরা তালা ভেঙে দিলে অবরুদ্ধ শিক্ষকরা বেরিয়ে যায়। এসময় সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।
এমন পরিস্থিতিতে রোববার রাত সাড়ে ৯টায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সব ছাত্র-ছাত্রীকে সোমবার সকাল ৯টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। তবে এ সিদ্ধান্ত না মেনে পরদিন হল না ছেড়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন তারা।