নিহতের ১ যুগ পর মামলা

জামায়াতকর্মী জাহিদুল হত্যা : অপপ্রচারে বিব্রত বাদি

যারা বিচার কার্যক্রমকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান নিহত জাহিদুলের স্ত্রী ছবিরন নেছা।

কয়রা (খুলনা) সংবাদদাতা

Location :

Koyra
কয়রা
কয়রা |ছবি : সংগৃহীত

দীর্ঘ এক যুগ পরে খুলনার কয়রায় জামায়াতকর্মী জাহিদুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। নিহত জাহিদুলের স্ত্রী ছবিরন নেছা বৃহস্পতিবার কয়রা উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলাটি করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে নথিভুক্ত করার জন্য কয়রা থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

কয়রা উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মইনুল ইসলাম শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক দু’জন সংসদ সদস্যসহ মোট ১১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে কয়রা সদরে একটি মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই মিছিল ও সমাবেশে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা গুলিবর্ষণ, বোমা বিস্ফোরণ ও দেশীয় অস্ত্রসহ লাঠিসোটা নিয়ে চতুর্মুখী হামলা চালায়। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের হামলায় ২৯ জন আহত হন। এছাড়া জাহিদুল, ফারুক শেখ ও মুসানুর গুলিবিদ্ধ হয় এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে জাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

মামলার বাদি ছবিরন নেছা নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমার স্বামী অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের ছিলেন। তিনি একজন দিনমজুর ছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। ১৬ মাস বয়সী একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বিচারের দাবিতে লোকের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভয়ে কেউ সহযোগিতা করার সাহস পায়নি। এতদিন পরিবারের সদস্যরা মামলা-হামলার ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।’

তিনি আরো বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরে দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে পরিবারের সদস্যদের পরামর্শে কয়রা উপজেলা প্রেস ক্লাবে স্বামী হত্যার বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছি এবং ন্যায়বিচারের আশায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। দীর্ঘদিন পরে মামলাটি রুজু হওয়ায় পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন।’

তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘কিছু সাংবাদিক যারা পূর্বে তথাকথিত ফ্যাসিস্ট সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে, গত ৫ আগস্টের পরে পালিয়ে থেকে বর্তমান পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অপপ্রচার ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করে তারা আবার জনমতে সংশয় সৃষ্টি করছে। কয়রা উপজেলার হাজার হাজার মানুষ আমার স্বামীর হত্যার স্বাক্ষী রয়েছে। তারাও এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চায়।’

যারা বিচার কার্যক্রমকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার জন্য তিনি প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।

নিহত জাহিদুল ইসলামের বোন‌ রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘কোর্টে মামলা করলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব আলী সানার আত্মীয়-স্বজন ও তাদের অনুসারী কয়েকজন এসে আমাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। কয়েকজন এসে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মিথ্যা মামলা করেছি, আমাদের এর প্রতিদান বুঝিয়ে দেবে- এই ধরনের কথা বলে শাসিয়ে গেছে। আমরা ন্যায়বিচারের আশায় মামলা করেছি, কিন্তু এসব কর্মকাণ্ডে বিব্রত বোধ করছি।’

ওই মিছিলে গুলিবিদ্ধ হওয়া ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন পরে ন্যায়বিচারের আশায় বুক বেঁধে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু বিগত দিনের মতো স্বৈরাচার সরকারের দোসরদের অপতৎপরতা দেখে হতাশ হয়ে পড়েছি। আমি ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর ওই মিছিলে গিয়ে বুকে ও কোমরে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে ছিলাম। এতদিন কেউ আমাদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেনি। ওই দিনে আহত হয়ে চিকিৎসা করতে গিয়ে আমিসহ জামায়াতের বহু নেতাকর্মী ভিটাবাড়ি বিক্রয় করে দিয়েছি। তবে এখন সুদিন এসেছে, এই নির্মমভাবে নির্যাতনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণে দলীয় ও সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা পাব বলে আশা করছি।’

খুলনা জেলা জামায়াতের ইসলামীর আমির মাওলানা ইমরান বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিগত দিনের সকল হত্যাকাণ্ড ও জুলুম নির্যাতনের বিচার চায়। তবে কোনো নিরপরাধ মানুষের হয়রানি বা কষ্টের শিকার না হয় সে ব্যাপারে নিশ্চিত করতে হবে।’