অন্ধ হয়েও থেমে নেই গণি মিয়া, বাঁশের ঝুড়ি বুনে চলছে সংসার

বন-জঙ্গল থেকে বাঁশ কুড়িয়ে সেই বাঁশ চিরে তৈরি করেন কুলা, টেপারি আর ঝুড়ির মতো হস্তশিল্প। প্রতিদিন বাজারে বসে এগুলো বানান ও বিক্রি করেন তিনি

মুহাম্মদুল্লাহ, সখীপুর (টাঙ্গাইল)

Location :

Sakhipur
মো: আব্দুল গণি
মো: আব্দুল গণি |ফাইল ছবি

মুহাম্মদুল্লাহ, (টাঙ্গাইল)

এক সময়ের সুস্থ-স্বাভাবিক মো: আব্দুল গণি গত ১৮ বছর ধরে দেখতে পান না পৃথিবীর আলো। ৬৭ বছর বয়সী মানুষটি বয়সের সাথে সাথে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে এখন পুরোপুরি অন্ধ। তবুও থেমে যাননি তিনি, কারো কাছে হাত পাততে চান না। বন-জঙ্গল থেকে বাঁশ কুড়িয়ে সেই বাঁশ চিরে তৈরি করেন কুলা, টেপারি আর ঝুড়ির মতো হস্তশিল্প।

প্রতিদিন বাজারে বসে এগুলো বানান ও বিক্রি করেন তিনি। কাজ করার সময় ধর্মীয় গজল বা গান গাইতে যেন ভুলে থাকার চেষ্টা করেন নিজের কষ্ট। দিন শেষে হাতে আসে মাত্র ৭০-৮০ টাকা।

গণি মিয়ার বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের বুড়িচলা গ্রামে। সংসারের সাথী ৬২ বছরের হাউসি বেগম। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী।

গণি মিয়ার দুই ছেলে প্রবাসে থাকেন। ভেবেছিলেন বিদেশে থাকা ছেলেদের দেখভালে বার্ধক্যের দিনগুলো স্বস্তিতে কাটাবেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ছোট ছেলের ঘরে মা-বাবার আশ্রয় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আর্থিক সহায়তা মেলেনি। দুই ছেলে প্রবাসে থাকলেও তারা কেউই নিয়মিত খোঁজ নেন না। দেন না প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা। দারিদ্র্যের কঠিন বাস্তবতা মেনে নিয়ে এক প্রকার লড়াই করেই দিন কাটাচ্ছেন গণি-হাউসি দম্পত্তি। তবুও থেমে থাকেনি তাদের জীবন সংগ্রাম।

প্রতিবেশী জাকির হোসেন জানান, গণি ভাই খুব পরিশ্রমী মানুষ। চোখে দেখতে পান না, তবুও কখনো কারো কাছে হাত পাতেননি। বাঁশ কেটে কুলা-ঝুড়ি বানিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। স্ত্রী অসুস্থ, তাই সংসার চালানো আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারি সাহায্য বা কোনো ভালো মানুষের সহায়তা পেলে তাদের জীবনে স্বস্তি আসত।

স্থানীয়রা জানান, আবদুল গণির প্রতিবেশীরা মাঝে মাঝে সাহায্যের হাত বাড়ালেও তা পর্যাপ্ত নয়। সরকারি সহযোগিতা বা কোনো বিত্তবান মানুষের সহায়তা পেলে জীবনের শেষ বয়সে অন্তত শান্তিতে বাঁচতে পারতেন।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ জানান, গণি মিয়াকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। অন্ধ হয়েও গণি মিয়া বাঁশ-বেত দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করেন, এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।