‘নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মাদরাসা থেকে পালিয়ে বাবা-মাকে না জানিয়ে আন্দোলনে গিয়েছিলাম যাতে দেশে বৈষম্য না থাকে, দেশের মানুষ ভালোভাবে বাঁচতে পারে। দেশের মানুষ ভালো থাকলেই আমরা ভালো থাকব।’ কথাগুলো বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত মতিনাতুল উলুম রহমানিয়া মাদরাসার ছাত্র মিজানুল হক। গত বছরের ৪ আগস্ট বগুড়ার শেরপুরে পুলিশের গুলিতে আহত হন তিনি।
তিনি বলেন, ‘মাদরাসা থেকে পালিয়ে বাড়িতে এসে স্বৈরাচার হাসিনার পতন ও ছাত্রহত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনে যোগ দেই। সরকার পতনের আন্দোলন সফল হলেও জীবন যুদ্ধে আমি যেন এক পরাজিত সৈনিক। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হলেও চিকিৎসা অভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি না।’
পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় তাকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল অনেক। কিন্তু সরকার পতনের আন্দোলনে সফল হলেও পরিবারের স্বপ্ন বাস্তবে রুপ দিতে পারছে না ছাত্র মিজানুল হক।
উপজেলার পৌর এলাকার হাসপাতাল রোডের একটি টিনসেড ভাড়া বাসায় মা-বাবা ও তিন ভাইকে নিয়ে তাদের সংসার। তার বাবার নাম হুমায়ুন কবির নয়ন। নিজস্ব জমিজমা না থাকায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন বাবা। যে টাকা আয় হয়, তা দিয়ে চলে তাদের সংসার।
কয়েক দফা অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে মিজানুলের শরীর থেকে প্রায় ১৫টি গুলি বের করা হয়েছে। মুখে এখনো গুলি রয়ে গেছে। রোদে বের হলে চুলকানি ও জ্বালাপোড়াসহ তীব্র ব্যাথায় কাতরাতে হয়।
মিজানুল হকের পরিবার মনে করছে, তাকে উন্নত চিকিসার জন্য ঢাকায় নিতে পারলে তিনি শিগগিরই সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারতেন। কিন্তু পরিবারের সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই।
মিজানুল হক বলেন, ‘৪ আগস্ট দুপুরে ছাত্র-জনতার একটি মিছিল মহাসড়ক দিয়ে হাসপাতাল রোডের সামনে পৌঁছালে পুলিশ মিছিলের সামনে থেকে গুলি চালায়। এতে মুখে, বুকে, হাত ও পা-সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ১৬-১৮টি ছররা গুলি লাগে। এ সময় আমি রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে হাসপাতাল মসজিদের ঈমাম হাফেজ মাওলানা রবিউল ইসলাম আমাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
এরপর কয়েক দফা অপারেশন করে বিভিন্ন সময় শরীর থেকে গুলিগুলো বের করলেও মুখের গুলি বের না করায় অসম্ভব যন্ত্রণা হয়। অনেক রাতই ব্যথায় রাতে ঘুমাতে পারি না।’
মিজানুল হক আরো বলেন, ‘চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলি মুখের মাংসের অনেক গভীরে, অপারেশন ছাড়া বের করা সম্ভব নয়।’
আহত ছাত্রের পিতা হুমায়ুন কবির কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলেন, ‘আমি একজন দিনমজুর। ছেলের অপারেশন করার মতো টাকা আমার নেই। দেশের জন্য ছেলেটা আন্দোলনে নেমে গুরুতর আহত হলেও আর্থিক সহায়তা তো দূরের কথা এখন পর্যন্ত কেউ খোঁজখবর নেয়নি। যদি মিজানুলের উন্নত চিকিৎসা দেয়া যায় তাহলে সে শিগগিরই সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। এ জন্য সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।’