বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের ২৩ কিলোমিটার যেন মরণফাঁদ

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতির কারণে সড়কটি এমন বেহাল দশা।

বিএম রবিউল ইসলাম, উজিরপুর (বরিশাল)

Location :

Wazirpur
জয়শ্রী থেকে গৌরনদীর ভুরঘাটা পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার মহাসড়কের বেহাল দশা
জয়শ্রী থেকে গৌরনদীর ভুরঘাটা পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার মহাসড়কের বেহাল দশা |নয়া দিগন্ত

বরিশাল-ঢাকা ব্যস্ততম মহাসড়কের একাংশ যেন এখন মরণফাঁদ। প্রতি মিনিটে অসংখ্য যানবাহন চলাচল করলেও উজিরপুরের জয়শ্রী থেকে গৌরনদীর ভুরঘাটা পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার মহাসড়কে ভয়াবহ খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি মহাসড়কের ২৩ কিলোমিটার অংশে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রশস্তকরণ করা হচ্ছে। কিন্তু সেই কাজ শেষ না হতেই আবার অসংখ্য খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে শত শত দূরপাল্লার বাস, ট্রাকসহ স্থানীয় যানবাহন।

বরিশাল সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মহাসড়কের এই ২৩ কিলোমিটার অংশের দু’পাশ ছয় ফুট সম্প্রসারণে ৪৮ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়। বাস্তবায়ন করে এমএম বিল্ডার্স। কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালের ৩০ জুন। পরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মহাসড়কের এই অংশ রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য প্রায় ৪৮ কোটি টাকার কাজ পায় মাহফুজ খান লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

বুধবার (৩০ জুলাই) সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের বেশিভাগ স্থানে ছোট-বড় গর্ত। অনেক স্থানে রাস্তা ফুলে ও ফেটে কার্পেটিং উঠে গেছে। কোথাও কোথাও বিশাল অংশ দেবে আছে। খানাখন্দের ভয়াবহ অবস্থা দেখা গেছে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। সড়কের বড় বড় গর্তগুলো ইট ও বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। কিন্তু তা উঠে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও বৃষ্টির পানি জমে থাকায় গর্ত দেখা যায় না। সেখানে মোটরসাইকেল, অটোরিকশাসহ ছোট যান পড়ে দুর্ঘটনা ঘটছে।

স্থানীয় বাসিন্দা চন্দ্রহার গ্রামের রাজিব সরদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রায় ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করার কাজ শেষ হতে না হতেই সড়কটি খানাখন্দে ভরে গেছে। তাদের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতির কারণে সড়কটি এমন বেহাল দশা।

এই সড়কে নিয়মিত লোকাল বাসচালক সাদ্দাম হোসেন জানান, ভুরঘাটা থেকে জয়শ্রী পর্যন্ত সড়কটিতে এখন ভোগান্তির শেষ নেই। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এটি এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে।

গ্রিন লাইন পরিবহনের চালক আনোয়ার শিকদার বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়ক সংস্কারের সময় নিম্নমানের সামগ্রী দেয়ায় এভাবে রাস্তার বিভিন্নস্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দুর্নীতির কারণে আজকে রাস্তার এই অবস্থা। এ কারণেই রাস্তা মেরামত করতে না করতেই আবার খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে যায়।’

কাভার্ডভ্যানের চালক বাবু ফকির বলেন, ‘প্রতিনিয়ত ঢাকা থেকে বরিশালে মালামাল বহন করি। রাস্তার যে অবস্থা সব সময় আতঙ্কে থাকি। কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে জীবনটা হারাই! আমাদের পেটের তাগিদে গাড়ি চালাতে হয়। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাই। সরকারের কাছে অনুরোধ, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সড়কটি সংস্কার করা হোক।’

এ নিয়ে কথা হলে ঠিকাদারের এক প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে দাবি করেন, অতিবৃষ্টির কারণে এ দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বরিশাল সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: নাজমুল ইসলাম জানান, তারা দুর্ভোগ লাঘবে সড়কের গর্ত ভরাট করছেন।

তিনি বলেন, ‘চলমান সংস্কারকাজ আমাদের বিভাগের মাধ্যমে করছি। প্রতিনিয়ত শ্রমিকেরা চারটি গাড়িতে করে একযোগে চার গ্রুপে কাজ করছে। কিন্তু বর্ষার কারণে সড়কটিতে খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়।’