নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাহুলের তৈরি বিমান উড়ল আকাশে

রাহুল সেখ (১৫) রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে সেটিকে ১০ মিনিট আকাশে উড়িয়ে তাক লাগিয়েছেন সবাইকে। মাত্র চার দিনের পরিশ্রমেই এই কিশোর দেখিয়ে দিয়েছেন সৃজনশীলতার অনন্য নজির।

এম মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী

Location :

Rajbari
নিজের তৈরি বিমান নিয়ে রাহুল
নিজের তৈরি বিমান নিয়ে রাহুল |নয়া দিগন্ত

মায়ের কাছ থেকে নেয়া ৩০০ টাকা আর নিজের জমানো কিছু সঞ্চয় দিয়ে তৈরি করলো স্বপ্নের উড়োজাহাজ! রাজবাড়ীর নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাহুল সেখ (১৫) রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে সেটিকে ১০ মিনিট আকাশে উড়িয়ে তাক লাগিয়েছেন সবাইকে। মাত্র চার দিনের পরিশ্রমেই এই কিশোর দেখিয়ে দিয়েছেন সৃজনশীলতার অনন্য নজির।

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির প্রত্যন্ত বারমল্লিকা গ্রামের কৃষক শামসুল শেখের ছেলে রাহুল। সে স্থানীয় রামদিয়া বেনীমাধব বিপিনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী। রাহুলের স্বপ্ন ছিল একদিন বড় বিজ্ঞানী হওয়ার। সেই স্বপ্ন নিয়ে নিজ হাতে বানিয়েছে বাংলাদেশ বিমান-৭৮৭ ‘অচিন পাখি’ মডেলের একটি উড়োজাহাজ, যা সফলভাবে আকাশে ওড়াতেও সক্ষম হয়েছে সে। রাহুল ক্লাসের পড়ালেখায় মনোযোগী। খেলাধুলায়ও দারুণ আগ্রহ তার।

রাহুলের এমন সাফল্য শিক্ষক, সহপাঠী ও এলাকাবাসীকে অবাক করে দিয়েছে। এখন গ্রামজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ক্ষুদে বিজ্ঞানী রাহুল। প্রতিদিন অনেক মানুষ রাহুলের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে তার তৈরি ছোট্ট বিমান দেখার জন্য।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচে তৈরি এই বিমানটি ব্যাটারিচালিত। তবে বিমানের কাঠামো তৈরি থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেছে রাহুল নিজ হাতে। এর পেছনে ছিল তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি, ইউটিউব থেকে শেখা জ্ঞান, প্রচুর ধৈর্য। শুরুতে প্রথম মডিউলটি ওজন বেশি হওয়ায় উড়তে ব্যর্থ হলে অনেকে হাসাহাসি করলেও সে দমে যায়নি। টানা চার দিন পরিশ্রমের পর অবশেষে নিজের হাতে বানানো উড়োজাহাজটি আকাশে ওড়াতে সক্ষম হয় খুদে আবিষ্কারক রাহুল। ছোটখাটো নানা গ্যাজেট বানানোর কারণে রাহুল এখন গ্রামে ‘ক্ষুদে বিজ্ঞানী’ হিসেবে পরিচিত।

রাহুল বলেন, ‘মায়ের কাছ থেকে মাত্র ৩০০ টাকা নিয়ে ও নিজে কিছু টাকা জমিয়ে মোটর, ব্যাটারি ও রিমোট কন্ট্রোলসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কিনে মাত্র চার দিনে আমি বিমানটি হাতে তৈরি করেছি। বিমানটি আকাশে উড়তে দেখে আমার ভালো লাগছে। আমার বিমান দেখতে অনেক মানুষ ভিড় করছেন। এতে আমি অনেক খুশি।

প্রতিবেশী মিঠু মল্লিক বলেন, রাজবাড়ী জেলার মধ্যে একমাত্র রাহুলই এমন একটি বিমান তৈরি করেছে ও আমাদের জেলার গর্ব। ওর জন্য অনেক দোয়া করি ও অনেক বড় হোক।

রাহুলের মা আলেয়া বেগম বলেন, আমার ছেলে দিনরাত পরিশ্রম করে বিমানটি তৈরি করেছে। প্রতিদিনই বিমানটি দেখতে বাড়ির ওপর অনেক লোকজন আসছেন। আমার কাছে অনেক ভালো লাগছে। আমার ছেলে ভবিষ্যতে আরো অনেক বড় কিছু আবিষ্কার করবে এই দোয়া করি।

রাহুলের বাবা শামসুল শেখ বলেন, আমি কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমার দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে রাহুল সবার ছোট। ও শুধু বিমানই নয়, আমার ছেলে ফ্যান-লাইটসহ অনেক কিছু বানিয়েছে। এসব জিনিস তৈরির প্রতি ওর ঝোঁক বেশি। আমিও চাই এই লাইনেই ও নিজের মতো করে বড় হোক। আমার পক্ষ থেকে যতদূর সহযোগিতা করার আমি করব।

রামদিয়া বেনীমাধব বিপিনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শংকর পোদ্দার বলেন, ‘রাহুল শেখ আমার স্কুলের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। কারিগরি দিক থেকে তার অসম্ভব ভালো প্রতিভা রয়েছে। সে বাড়িতে বসে ইউটিউব দেখে জ্ঞান নিয়ে ইলেকট্রনিকস বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে। সম্প্রতি উড়োজাহাজ বানিয়ে সেটা আকাশে উড়িয়েছে। বিষয়টি শুনে আমরা অবাক হয়েছি। তার মধ্যে ভালো প্রতিভা রয়েছে। রাহুলের ইচ্ছা সে বড় হয়ে প্রকৌশলী হবে।’