চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার হাসাদাহ ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে মনিরুল ইসলাম ফেলা (৫০) নামে এক দিনমজুরকে গলা কেটে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন তার স্ত্রী পাপিয়া খাতুন (৪২)। হত্যাকাণ্ডের পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে আলমডাঙ্গা থেকে গ্রেফতার করেছেন পুলিশ।
পুলিশ জানায়, শনিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে পারিবারিক কলহের একপর্যায়ে পাপিয়া খাতুন একটি হাঁসুয়া দিয়ে স্বামী মনিরুল ইসলামের গলায় কোপ দেন। এরপর তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পাশের উপজেলা আলমডাঙ্গার বাশবাড়িয়া গ্রামে খালা মর্জিনার বাড়িতে পালিয়ে যান। সেখান থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতির সময় রাত ৪টার দিকে তাকে গ্রেফতার পুলিশ।
নিহত মনিরুল ইসলাম ফেলা জীবননগর উপজেলার বালিহুদা গ্রামের মরহুম দিদার উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে টাকা-পয়সা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। পাপিয়ার অভিযোগ, মনিরুল নিয়মিত শারীরিক নির্যাতন করতেন এবং একাধিক পরকীয়ার সম্পর্কেও জড়িত ছিলেন। সম্প্রতি পাপিয়ার কাছ থেকে নেয়া টাকা দিয়ে মনিরুল পাশের গ্রামে একটি জমি ক্রয় করেন, যা পাপিয়ার নামে অর্ধেক রেজিস্ট্রি করার প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত তা না করায় দাম্পত্য কলহ বাড়ে। এছাড়া তাদের ছেলে রাজু হোসেনকে (২৬) বিদেশ যাওয়ার খরচ নিয়েও পরিবারে উত্তেজনা চলছিল।
পুলিশ আরো জানায়, শনিবার সকাল থেকেই মনিরুল, পাপিয়া ও ছেলে রাজুর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। একপর্যায়ে মনিরুল স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। তখন পাপিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, এই বাড়িতে হয় তুই থাকবি, না আমি থাকব। এরপরই তিনি স্বামীর গলায় হাঁসুয়া দিয়ে কোপ দেন বলে স্বীকারোক্তিতে জানান।
ঘটনার পর থেকেই পাপিয়া ও ছেলে রাজু পলাতক ছিলেন। পরে জীবননগর থানা পুলিশের একটি দল আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের সহযোগিতায় বাশবাড়িয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে পাপিয়াকে গ্রেফতার করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরের দিকে মনিরুল ইসলামের বাড়ি থেকে চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তার গলা কাটা লাশ দেখতে পায় এবং দ্রুত জীবননগর থানা-পুলিশকে খবর দেন।
প্রতিবেশী আকিদুল ইসলাম জানান, ঘটনার কিছুক্ষণ পর মনিরুলের ছেলে রাজু মোবাইল ফোনে তার কাছে জানতে চান যে তার বাবা কি মারা গেছেন? এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের সময় রাজুও ঘটনাস্থলে ছিলেন।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন হোসেন বিশ্বাস জানান, নিহত মনিরুল ইসলাম ফেলার ভাই জহির উদ্দিন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি হাঁসুয়া ও একটি কুড়াল উদ্ধার করা হয়েছে।
ওসি আরো বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া খাতুন স্বামীকে গলা কেটে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছেলে রাজু পলাতক রয়েছে। তাকে
গ্রেফতার অভিযান চলছে।’