মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট আঞ্চলিক সড়কের ফুলপুর ও তারাকান্দায় পৃথক দু‘টি সড়ক দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় অন্তত আরো ২০ জন। নিহতদের মধ্যে তারাকান্দায় তিনজন ও ফুলপুরে আটজন।
আজ শনিবার সকালে পুলিশ জানায়, ফুলপুরে যাত্রীবাহী মাহেন্দ্র ও বাসের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে। এর আগে, শুক্রবার (২০ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফুলপুরের ইন্দারাপার মোড়ে বাস ও মাহিন্দ্রার সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারাকান্দার রামচন্দ্রপুর এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে আরো তিনজন নিহত হন। ফুলপুরে নিহতদের মধ্যে মাহিন্দ্রার চালক ও সাতজন যাত্রী রয়েছেন।
এদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- ফুলপুর উপজেলার কাজিয়াকান্দা গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে ফরিদ মিয়া (৩৮), নিশুনিয়াকান্দা গ্রামের ময়েজ উদ্দিনের ছেলে জহর আলী (৭০), বাট্টা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের স্ত্রী হাসিনা খাতুন (৫০), পাশের হালুয়াঘাট উপজেলার কয়ারহাটি গ্রামের মরহুম জবান আলীর ছেলে শামসুদ্দিন (৬৫) ও রংপুরের আজিম উদ্দিন (৩৫)।
অন্যদিকে তারাকান্দায় নিহতরা হলেন- ধোবাউড়া উপজেলার বরাটিয়া গ্রামের মরহুম আব্দুল বারেকের স্ত্রী জুবেদা খাতুন (৮৫), ফুলপুর উপজেলার মদীপুর সুতারপাড়া গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে রাকিবুল হাসান (১৫) ও ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের শুইলাম বুধবারিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম (৩৫)। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আলম সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিকেলে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা তারাকান্দা থেকে ময়মনসিংহের দিকে যাচ্ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ময়মনসিংহ-শেরপুর আঞ্চলিক সড়কের রামচন্দ্রপুর এলাকায় হিমালয় ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্সের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
ঘটনাস্থলেই অটোরিকশার যাত্রী এক নারী ও এক শিশু নিহত হয়। এ সময় অটোরিকশার চালক ছাড়াও আরো তিন যাত্রী আহত হন। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্সের হেলপারসহ আরো একজন আহত হন। পরে আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অটোরিকশার চালক মোহাম্মদ আলম মারা যান।
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: টিপু সুলতান বলেন, অ্যাম্বুলেন্সেরটি পাশের হালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। গাড়িতে কোনো রোগী ছিল না। দুর্ঘটনার পরই চালক পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।
এদিকে রাতে হালুয়াঘাট থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী বাংলা পরিবহনের একটি বাস দ্রুতগতিতে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। আর ফুলপুর থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী মাহিন্দ্রা হালুয়াঘাটের দিকে যাচ্ছিল। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাসটি ইন্দারাপার মোড়ে কুরিয়ার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় আসতেই বিপরীত দিক থেকে আসা মাহিন্দ্রার সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মাহিন্দ্রায় থাকা চারজন পুরুষ ও একজন নারী নিহত হন। এ সময় গুরুতর আরো আটজন আহত হন। হতাহতদের মধ্যে দু‘জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ছয়জনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন ও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দু‘জনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার সাথে সাথে বাসের চালক পালিয়ে যান। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা বাসে আগুন ধরিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আব্দুল হাদি বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা বাসে আগুন ধরিয়ে দিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। নিহতদের মধ্যে সবাই মাহিন্দ্রার যাত্রী ছিলেন। তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো: সফিকুল ইসলাম বলেন, রাতে ফুলপুরে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় ছয়জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে মাহিন্দ্রার চালক ও এক যাত্রী মারা গেছেন।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া তারাকান্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় আরো ছয়জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের অর্থোপেডিক্স ও সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে অটোরিকশার চালক মারা গেছেন। অন্যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আখতার উল আলম বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দুর্ঘটনার শিকার সিএনটি অটোরিকশা, বাস এবং যানগুলোর দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া অবস্থা দেখে মনে হয়েছে বেপরোয়া গতিই এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে, আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।