ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মরণ ফাঁদ, ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা

ঢাকা-টাংগাইল মহাসড়কের গোড়াই অংশে স্থায়ী সংস্কারে অভাবে নিয়মিতই ঘটছে দুর্ঘটনা।

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা

Location :

Mirzapur
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন, ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন, ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা |নয়া দিগন্ত

‘আমার গাড়ির সামনের ও পেছনের চাকা একসাথে ব্লাস্ট করেছে। ভেতরে আমার পরিবারসহ দুটি ছোট শিশু। কীভাবে গাড়িটা কন্ট্রোল করে নিরাপদে থামিয়েছি, সেটা শুধু আমিই জানি।’ দুর্ঘটনার কবলে পড়া অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বি খন্দকার কার থেকে বের হয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অসহায়ের মতো কথাগুলো বলছিলেন। স্থায়ী সংস্কারে অভাবে মহাসড়কের গোড়াই অংশে এধরণের ঘটনা নিয়মিতই ঘটছে।

জানা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশের স্কয়ার ফার্মাসিক্যাল হতে মির্জাপুর উপজেলা কুরনী পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় অসংখ্য খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। দিন দিন এসব খানখন্দ বড় আকার ধারণ করছে। এছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে রাস্তা ডেবে গিয়ে চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে গেছে। বিশেষ করে রাতের বেলা বড় ধরণের যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

মহাসড়কের এসব স্থানে স্থায়ীভাবে সংস্কারের কাজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোনায়েম গ্রুপের করার কথা থাকলেও তারা করছে না এবং কোনো খোঁজও রাখছে না।

রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের উদ্যোগে বিভাগীয়ভাবে ইট পুতে জোড়াতালি দিয়ে কয়েকটি খানাখন্দ ভড়াট করা হলেও যানবাহনের চাকার ঘর্ষণে তা ভেঙ্গে উঠে যাচ্ছে। বৃষ্টির সময় খানাখন্দ পানিতে ডুবে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এসব দুর্ঘটনায় যানবাহনের ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। কাদা-পানি ছিটকে কাপড়চোপড় নষ্ট হচ্ছে। এমন ঝুঁকি ও দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছে মানুষ এবং সকল ধরনের যানবাহন।

রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সরজমিন মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলা সদর থেকে হাইওয়ে থানা পর্যন্ত ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই মহসড়ক দিয়ে প্রতিদিন টাঙ্গাইল জেলা ছাড়াও দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২৬টি জেলার বিভিন্ন রুটের ৩৫ থেকে ৪০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। এছাড়াও মহাসড়ক দিয়ে স্থানীয় মোটরসাইকেল, সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ ছোট ছোট অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে। মহাসড়কের মির্জাপুর বাইপাস নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকার আন্ডারপাসের পূর্ব পাশ হতে মা সিএনজি স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ৫শ’ মিটার এবং দেওহাটা সেতুর পূর্বপাশে প্রায় ৩শ’ মিটার রাস্তা ডেবে গেছে। রাস্তার পিচ গলে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুতগতির যানবাহন আন্ডারপাস নেমে মহাসড়কের ওই স্থানের ঢেউয়ে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ে।

মহাসড়কের সোহাগপুর সেতুসহ কয়েকটি সেতুর দুই পাশে কার্পেটিং ওঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব স্থানেও দুর্ঘটনা ঘটছে। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ, পাথর ও খুয়া উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দ্রুত গতির যানবাহন ওইসব গর্তে পড়ে চাকা নষ্ট সহ যানবাহনের ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। অনেক সময় বাসের যাত্রীরা বাসের ভেতরে সিট থেকে সটকে পড়ে আহত হচ্ছেন বলে অভিযোগে জানা গেছে।

রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে কর্তৃক ইট পুতে গর্ত সংস্কার করলেও তা যানবাহনের চাকার ঘর্ষণে ভেঙ্গে আবার গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। দিন দিন এসব খানাখন্দ বড় আকার ধারণ করছে।

মোটরসাইকেল চালক গোড়াইল গ্রামের মাসুদ মিয়া বলেন, ‘মার্কেটিং চাকরির কারণে মোটরসাইকেল নিয়ে মহাসড়কে চালানোর সময় অতিরিক্ত মনোযোগ দিতেও অনেক সময় দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। মোটরসাইকেল চালানোর সময় খারাপ রাস্তা বুঝার উপায় নেই বিশেষ করে রাতের বেলা আরো ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। হঠাৎ সামনে গর্ত পড়ে। অনেক সময় গর্ত এড়ানো যায় আবার এড়াতে পারি না। গর্তে পড়ে ব্যাপক ঝাকুনি খেতে হয়। ব্যস্ততম এই মহাসড়কের গর্তগুলো সংস্কার করা খুবই জরুরি।’

গোপালপুর থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতগামী বাসের চালক কাদের মিয়া বলেন, ‘মহাসড়কে সৃষ্টি হওয়া গর্ত খুবই ভয়ংকর। বড় যানবাহনের তেমন ক্ষতি না হলেও ঝাকুনিতে অনেক সময় যাত্রীরা আহত হন। গর্তগুলো মোটরসাইকেল চালকদের জন্য পরিস্থিতি খুবই ভয়ংকর। রাতের বেলা মহাসড়কের এ অংশ যেন হয়ে ওঠে মরণফাঁদ। রাস্তা দ্রুতগতির মোটরসাইকেল গর্তে পড়লে দুর্ঘটনা নিশ্চিত।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনার কবলে পড়া বি খন্দকার নামে একজন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী তার ফেইসবুক আইডি থেকে লাইভে গিয়ে বলেন,‘অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলাম!! গোড়াই মির্জাপুর হাইওয়ে থানার সামনেই মরণ ফাঁদ,অথচ তাদের নজরে এগুলো পড়েনা!!’

তিনি আরো জানান, ‘এখানে প্রতিদিনই একাধিক গাড়ির চাকা ফেটে যাচ্ছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। আমার গাড়ির সামনের ও পেছনের চাকা একসাথে ব্লাস্ট করেছে। ভেতরে ছিলো আমার পরিবারসহ দুটি ছোট শিশু। কীভাবে গাড়িটা কন্ট্রোল করে নিরাপদে থামিয়েছি, সেটা শুধু আমিই জানি।’

হাইওয়ে থানার দায়িত্ব ছিলো রোড অ্যান্ড হাইওয়ে অথরিটিকে অবহিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তারা সেটা করেনি।

মনে হচ্ছে, তারা হয়তো অপেক্ষা করছে, কোনো নিষ্পাপ প্রাণের মৃত্যু ঘটুক! তারপর গঠন করা হবে তদন্ত কমিটি।

প্রবাসী বি খন্দকার দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে পরিবার নিয়ে সহিহ-সালামত আছি। আমার ২৭ বছরের গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা ছিলো বলে হয়তো আমার প্রাইভেটকার আজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিলাম। পরিবার নিয়ে বেঁচে ফিরলাম। রাস্তা স্বাভাবিকভাবে চলার অনুপযুক্ত হয়ে গেছে ‘

সড়ক ও জনপথ সড়ক উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘মির্জাপুর উপজেলার কুরণী থেকে মহসড়কের স্কয়ার ফার্মসিক্যাল অংশে রাস্তার মেরামতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোনায়েম গ্রুপ। তারা সংস্কার কাজ করছে না। তাদের একাধিকবার চিঠি দিলে কোনো উত্তর দিচ্ছে না।’

তিনি আরো বলেন, জনস্বার্থে আমরা আমাদের বিভাগীয়ভাবে সংস্কার করতেছি। আমাদের সংস্কারের বাজেট খুবই সীমিত। প্রতিদিন বৃষ্টি হওয়ায় ঠিকমত সংস্কার করতে সমস্যা হচ্ছে।’