জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির ও ঢাকা-৮ আসনের জামায়াত পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, ‘যারা এখন পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করছে; সময়ের ব্যবধানে তারাও পিআরের দাবিতে আন্দোলন করবে। কারণ এরাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে সেদিন বলেছিল যে, শিশু আর পাগল ব্যতীত কেউ নিরপেক্ষ নয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে তারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। এমনকি এখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে তারা আদালতে আইনি লড়াই চালাচ্ছে।‘
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জামায়াতে ইসলামী শাহজানপুর পূর্ব থানা আয়োজিত ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার রূপকার ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির ভাষাসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম (রা.)। এ জন্য সেদিন যেই দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সুফল বুঝতে চেষ্টা করেনি আজ সেই দলগুলোই পিআর পদ্ধতির সুফল বুঝতে চেষ্টা করছে না। কারণ তারা ধরেই নিয়েছে আগামী নির্বাচনে তারা ক্ষমতায় বসবে। এ জন্য জনগণ যেই দাবিই উপস্থাপন করে তারা সেই দাবির বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তারা ভুলে গেছে নির্বাচন হয়নি এবং ক্ষমতায়ও বসে যায়নি। নির্বাচন হবে তারপরই ক্ষমতায় বসার চিন্তা করতে হবে। মনে রাখতে হবে স্বৈরাচার হাসিনার ক্ষমতার মসনদ যেই জাতি ভেঙে দিয়েছে সেই জাতি এখনো আছে, থাকবে। আগামীতেও কেউ স্বৈরাচার হাসিনার ভূমিকায় আবির্ভূত হলে তাদের পরিণতিও হাসিনার মতোই হবে।’
তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী ৪ দফা কর্মসূচিতে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে। তারমধ্যে একটি সমাজ সংস্কার ও সমাজ সেবা। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে জামায়াতে ইসলামী সমাজ সংস্কারের স্লোগানে কাজ করে আসছে। দলমত, ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে জামায়াত সমাজ সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। জামায়াতে ইসলামীর কাছে সবার আগে দেশ ও জাতি।’
পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি না করে গণভোটের মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান এ নেতা।
তিনি বলেন, ‘জুলাই চেতনা বাস্তবায়নের জন্য বিপ্লবী সরকারের কাছে দাবি জানাতে হয়, রাজপথে নামতে হয় এটি লজ্জাজনক। কোনো দলের প্রতি আনুগত্যশীল না হয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে মনোযোগী হওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে সরকার যদি কোনো রাজনৈতিক দল থেকে চাপ পেয়ে থাকে তবে সরকারকে সেটি জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারলে গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে হবে।’
জামায়াতের এ নেতা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন ব্যতীত দেশের মানুষ কোনো নির্বাচন মেনে নিবে না। জনগণ যেই নির্বাচন মেনে নিবে না, জামায়াতে ইসলামী সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।’
নুরুল হক নুরের উপর হামলার ঘটনার প্রসঙ্গে ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বিপ্লবী নেতার উপর হামলার এক সাপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সরকার এখন পর্যন্ত এ ঘটনার সাথে জড়িত একজনকেও গ্রেফতার করেনি ও করতে পারেনি। দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দেয়া হলে জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক ছাত্র-জনতাকে কাঠগড়া দাঁড় করানো হতে পারে। আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোটকে নিষিদ্ধ না করলে বিপ্লবী নেতাদের নুরের মতো পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে। তাই অনতিবিলম্বে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং ১৪ দলীয় জোটকে নিষিদ্ধ করে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।’
জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও শাহজানপুর পূর্ব থানা আমির মুহাম্মদ শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও থানা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে গাইনি, চর্ম, শিশু ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষকে স্বাস্থ্য সেবা দেন।- বিজ্ঞপ্তি