গৌরীপুর পৌরসভা সড়কগুলো খানাখন্দে ভরা, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

সড়কজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। বেশিরভাগ স্থানে পিচঢালাই নেই। একটু বৃষ্টি হলেই সেসব গর্তে পানি জমে যায়। প্রতিনিয়তই উল্টে পড়ছে যানবাহন। আহত হচ্ছেন যাত্রীরা।

ময়মনসিংহ অফিস

Location :

Gauripur
সড়কে উলটে যাওয়া গাড়ি
সড়কে উলটে যাওয়া গাড়ি |নয়া দিগন্ত

ময়মন‌সিংহের গৌরীপুর পৌরসভার বেশিরভাগ সড়কে এখন ভয়াবহ অবস্থা। একদিকে দেশের প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা, অন্যদিকে শহরের ভেতরে খানাখন্দে ভরা সড়ক। সংস্কার না হওয়ায় এমন পরিস্থিতিতে পৌরবাসীর ভোগান্তি কেবল বাড়ছে।

দেখা গেছে, সড়কজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। বেশিরভাগ স্থানে পিচঢালাই নেই। একটু বৃষ্টি হলেই সেসব গর্তে পানি জমে যায়। প্রতিনিয়তই উল্টে পড়ছে যানবাহন। আহত হচ্ছেন যাত্রীরা।

এছাড়া গৌরীপুর পৌর শহরের বালুয়াপাড়া এলাকার প্রধান সড়কসহ বি‌ভিন্ন এলাকায় সড়ক ভাঙাচোরা থাকায় শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।

পৌর নাগ‌রিকরা জানান, ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গৌরীপুর পৌরসভা। বর্তমানে পৌরশহ‌রের সিংহভাগ সড়কের বেহাল দশা। পৌরশহরে বিগত সরকারের আমলে প্রতিবছরই বেড়েছে পৌর কর, ট্রেড লাইসেন্সের ব্যয়। শুধু বাড়েনি সেবা।

সরেজমিন ঘু‌রে দেখা গে‌ছে, গৌরীপুর-শাহগঞ্জ সড়কের বালুয়াপাড়া মোড়ে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বালুয়াপাড়া মোড় থে‌কে সেতু পর্যন্ত ৫০০ গ‌জের মধ্যে ছোট-বড় ৩৪টি গর্ত রয়েছে। সড়কজুড়ে পানি থইথই করছে। এর মধ্যেই চলছে বিভিন্ন যানবাহন। বৃষ্টির পানি জমায় গাড়ি চলছে ধীরে। এ ব‌্যস্ততম সড়‌কে প্রতি‌দিনই যানবাহন উলটে দুর্ঘটনা ঘট‌ছে। রাস্তার পাশ দিয়ে লোকজনের হাঁটার কোনো উপায় নেই।

এ সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের হলেও এলাকাবাসী জানান, জনদুর্ভোগ থেকে বাঁচাতে দ্রুততম সময়ে মেরামত প্রয়োজন। গৌরীপুর সরকারি কলেজের সড়কটিরও বেহাল। সরকা‌রি কলেজ থেকে কৃষ্টপুর হয়ে সরকারপাড়াগামী রাস্তাটি অসমাপ্ত ও ভাঙাচোরা, খানা-খন্দকের কারণে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।

এছাড়া পৌর শহরের শহীদ মঞ্জু সড়কের সিনেমা হল মোড় থেকে দি চাইল্ড ব্লোজম কিন্ডারগার্টেন পর্যন্ত রাস্তাটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন বাজার পর্যন্ত একাধিক স্থানে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। এই সড়কের পাশে কিন্ডারগার্টেন ও নতুনবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া রেলওয়ে জংশনে প্রবেশের অন্যতম ব্যস্ত সড়কও এটি। গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ, আরকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নুরুল আমিন খান উচ্চ বিদ্যালয় ও পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী এ সড়কটি ব্যবহার করেন।

ফল ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, এ সড়কটিকে ঘিরে এখন কয়েকটি ফলের আড়ত রয়েছে। রাস্তাটি ভাঙা থাকায় আমরা অনেক বিপাকে পড়ছি।

অপর‌দি‌কে পৌর শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাছেরকান্দা সড়কের একাধিক স্থানে খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ইসলামাবাদ ফাজিল মাদরাসাটি, দাখিল, আলিম ও ফাজিল পরীক্ষার কেন্দ্র। অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ হলেও মাদরাসার সামনের সড়কটি ভেঙে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পাছেরকান্দা-বায়রাউড়া সড়কের শেষেপ্রান্তে ধসে গেছে। মাছুয়াকান্দা মসজিদের সাথে পুকুরপাড়ে রাস্তায় যানবাহন চলাচলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

শান্তিবাগ হ‌য়ে সরকারি কলেজ পর্যন্ত সড়কটি বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের সামনে থেকে শান্তিবাগ সড়কেও পানি উঠে। খানা-খান্দের কারণে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে পশ্চিম ভালুকার সড়কে পথচারী ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সাবেক পৌর কমিশনার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নানের বাসা থেকে পুরো রাস্তাটি অচল। কলাবাগান সড়কে বড় গর্তের কারণে যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে।

কলাবাগান এলাকার বা‌সিন্দা প্রভাষক কবি সেলিম আল রাজ বলেন, কলাবাগান এলাকার রাস্তাটির সাথে ড্রেনের সংযোগ না থাকায় পানি সরছে না। রাস্তাটি পুকুরে পরিণত হয়েছে। কালিপুর থেকে খেলার মাঠ সড়কটির কাপের্টিংও উঠে গেছে। গৌরীপুর-কলতাপাড়া সড়কের সতিষা মসজিদ থেকে সতিষা খালপাড়গামী সড়কের চানু মিয়া বাসার সামনে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সতিষা খালপাড় মোড় থেকে শেষপ্রান্ত পর্যন্ত রাস্তাটি ভাঙা ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সতিষা বিলপাড়া থেকে পূর্বদাপুনিয়া সেতু পর্যন্ত সিসি ঢালাই রাস্তাটির আস্তরণ উঠে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে। গোলকপুর মোড় থেকে গোলকপুরের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত সড়কটি ভাঙা।

দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় লোকজন এ সড়কগু‌লোর সংস্কারের দাবি জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। সড়ক সংস্কার না করায় দিন দিন এসব খানাখন্দ গাড়ির চাকার চাপে ভাঙতে ভাঙতে বড় হচ্ছে।

এ সময় ছবি তুলতে গেলে সড়কের পাশে রফিক মিয়া নামের একজন ব্যবসায়ী আক্ষেপ করে বলেন, ‘আর ছবি তুলে কোনো লাভ নেই। অনেকেই শুধু শুধু ছবি তুলে নিয়ে যান। রাস্তা মেরামতের কোনো কাজ হয় না। এই অবস্থা কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। কিছু ইট-সুরকি ফেলে রাখলেও তো চলাচল করা যেত।’

গৌরীপুর সরকারি টেক‌নিক‌্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা একজন ছাত্রী বলেন, সড়কের গর্তে গাড়ি আটকে থেকে সব সময়ই যানজট লেগে থাকে। অনেক সময় গর্তে জমে থাকা কাদাপানি ছিটে পোশাক নষ্ট হয়। অবস্থা এত খারাপ যে হেঁটে চলাই কষ্টকর। এই গর্তগুলো দ্রুততম সময়ে মেরামত করা প্রয়োজন।

গৌরীপুর পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, ‘আইওয়াইডিবি প্রজেক্টের অধীনে ২৮ কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা দেয়া হচ্ছে। এ প্রস্তাবনা অনুমোদিত হলে পৌর শহরের অধিকাংশ রাস্তা মেরামত ও সংস্কার হয়ে যাবে।’

গৌরীপুর পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার প্রমা বলেন, ‘প্রকল্পের জন্য ইতোমধ্যে প্রজেক্ট প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি যেহেতু বড় একটু সময় লাগবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে পৌর শহরের প্রত্যেকটি সড়কের মেরামত ও সংস্কার করা সম্ভব হবে।’