সিলেটের পাহাড়-টিলা কাটায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা

সম্প্রতি জেলায় পাহাড় ও টিলা কাটার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু অসাধু ব্যক্তি এ কাজে জড়িয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করছেন।

এমজেএইচ জামিল, সিলেট ব্যুরো

Location :

Sylhet
পাহাড়-টিলা কাটায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা
পাহাড়-টিলা কাটায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা |নয়া দিগন্ত

সিলেট জেলায় অবৈধভাবে পাহাড় ও টিলা কর্তন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।

বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনূর রুবাইয়াৎ।

এর আগে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে সিলেটের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: সারওয়ার আলম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।

আদেশে বলা হয়, সম্প্রতি জেলায় পাহাড় ও টিলা কাটার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু অসাধু ব্যক্তি এ কাজে জড়িয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করছেন। এ কারণে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পাহাড় ও টিলা কর্তন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হলো।

আদেশে আরো উল্লেখ করা হয়, এ নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি সরকারি আদেশ হিসেবে কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়েছে।

এদিকে গত রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) থেকে টিলা কাটা বন্ধে অ্যাকশনে নেমেছে প্রশাসন। ১ম দিনে টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে কাউকে আটক করা না হলেও টিলা কাটার সত্যতা পেয়েছে প্রশাসন। এ ছাড়া যারা টিলা কাটছেন কিংবা মদদ দিচ্ছেন তাদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সিলেট সদর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সিলেট সদর উপজেলার ১৪টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করা হয়। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোশনূর রুবাইয়াৎ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকার মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে পরিচালিত পৃথক অভিযানে পরিবেশ অধিদফতর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার বাহুবল, ওসমানী মুক্তিযোদ্ধা গুচ্ছগ্রাম, টিকরপাড়াসহ ১৪টি টিলাবেষ্টিত এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। এ সময় টিকরপাড়া এলাকাসহ কিছু স্থানে সম্প্রতি টিলা কেটে ঘর তৈরির সত্যতা পাওয়া গেছে। অন্য স্থানে সম্প্রতি টিলা না কাটলেও আরো আগে টিলা কেটে ফেলার চিহ্ন স্পষ্ট রয়েছে।

একই সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ছড়াগাং ও বুরজান চা-বাগানের জায়গা দখল করে টিলা কেটে বসতি নির্মাণ করার সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টি বাগান কর্তৃপক্ষকে ভ্রাম্যমাণ আদালত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানালে তারা বলছে, সেখান থেকে উচ্ছেদ করার জন্য চাবাগানের লোকজন গেলে দখলকারীরা সশস্ত্র হয়ে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে বাধা দেয়। এতে দখলকারী চক্রকে তাড়ানো যাচ্ছে না। এ বিষয়েও যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এদিকে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পরদিন সোমবারও সিলেট মহানগরের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে টিলা কাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযান শেষে সিলেট সদর উপজেলার ইউএনও খোশনূর রুবাইয়াৎ বলেন, ‘টিলা কর্তনকারী সবার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া টিকরপাড়া এলাকার যেখানে টিলা কেটে সম্প্রতি ঘর তৈরি করা হয়েছে সেসব ভেঙে ফেলার পাশাপাশি নতুনভাবে আর কোনো ঘর তৈরি করতে দেয়া হবে না। একইসাথে ঝুঁকিপূর্ণভাবে টিলার পাদদেশে বসবাসকারী কোনো পরিবারকেই সেখানে থাকতে দেয়া হবে না।’