মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি

নিহত পাইলটের পরিবারের পাশে গাজীপুর মহানগর জামায়াত নেতারা

‘আমরা এই পরিবারকে একা ভাবতে দেব না। শহীদ তৌকির ইসলাম দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন—এই আত্মত্যাগ যেন জাতির জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকে।’

মো: আজিজুল হক, গাজীপুর মহানগর
নিহত পাইলটের পরিবারের পাশে গাজীপুর মহানগর জামায়াত নেতারা
নিহত পাইলটের পরিবারের পাশে গাজীপুর মহানগর জামায়াত নেতারা |নয়া দিগন্ত

রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গত ২১ জুলাই (সোমবার) বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শহীদ হন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ তৌকির ইসলাম সাগর। দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ ও সাহসিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে যাওয়া এই তরুণ পাইলটের মৃত্যুতে শোকাহত পুরো জাতি।

এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় শহীদ পাইলটের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) গাজীপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গাজীপুর মহানগরের রানী বিলাসপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং নিহত পাইলটের শ্বশুর আবুল হোসেনের বাসভবনে পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দিতে যান।

জামায়াত নেতারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা জানান এবং বলেন, ‘আমরা এই পরিবারকে একা ভাবতে দেব না। শহীদ তৌকির ইসলাম দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন—এই আত্মত্যাগ যেন জাতির জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকে।’

এরপর সবাই মিলে শহীদ পাইলটসহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত সকলের রূহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন। এ সময় জামায়াত নেতারা বলেন, ‘আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন এবং পরিবারকে এই শোক সহ্য করার তৌফিক দেন।’

পরিবারের সদস্যরা এই সহমর্মিতাকে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করেন এবং বলেন, ‘আজ আমাদের পাশে এসে দাঁড়ানো এই ভালোবাসা আমাদের জন্য এক বিরাট সাহস ও সান্ত্বনার উৎস।’

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির মো: খাইরুল হাসান ও মো: হোসেন আলী, জামায়াতের মহানগর অফিস সেক্রেটারি আবু সিনা মামুন, গাজীপুর সদর মেট্রো থানা আমির সালাউদ্দিন আইয়ুবী, নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট সাদেকুজ্জামান খান, পুবাইল থানা আমির আশরাফ আলী কাজল, স্থানীয় ২৮ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের আমির মনির হোসেন খন্দকার, নায়েবে আমির মো: শামসুজ্জামান শিকদার, সেক্রেটারি শাহানুর হোসেন সাঈদ, মোশাররফ হোসেন মাস্টার, মো: সেলিম, আজহারুল ইসলামসহ আরো অনেকে।

এই মানবিক উপস্থিতি প্রমাণ করে—একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সংগঠনের কাজ শুধু রাজনীতি নয়, জনগণের দুঃখ-কষ্টের সময় তাদের পাশে দাঁড়ানোও।

নিহত পাইলটের শ্বশুর আবুল হোসেন জানান, তার দুই মেয়ে এক ছেলে। গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তাঁর ছোট মেয়ে আকসা হোসেন নিঝুমকে পাইলট তৌকির ইসলাম ওরফে সাগরের সাথে বিবাহ দেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে নিঝুমকে সাগরের হাতে তুলে দেন। নিঝুম গত ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং গত ফেব্রুয়ারিতে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। স্বামী তৌকিরের মৃত্যুতে নিঝুম মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত। তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে।

আবুল হোসেন আরো জানান, ঘটনার পর তাদেরকে জানানো হয় বিমান ক্রাশ হওয়ায় তৌকির নিখোঁজ রয়েছেন। এ খবর পেয়ে তারা দ্রুত ঢাকায় ছুটে যান, তৌকিরকে হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান।

তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনার দিন যিনি কনট্রোল রুমের দায়িত্বে ছিলেন তার সাথে আমাদের কথা হয়েছে। বিমানটি নিয়ে উঠার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তৌকির কনট্রোলকে জানায় বিমানটি নিচে নেমে যাচ্ছে, উপরে উঠানো যাচ্ছে না। তখন তাকে কনট্রোলরুম থেকে বলা হয় প্যারাসুট নিয়ে নেমে পড়ার জন্য। কিন্তু নিচে জনবহুল এলাকার দিকে বিমানটি ধাবিত হওয়ায় তিনি এটিকে খোলা মাঠের দিকে চালিত করতে চেয়েছিলেন। শেষ মূহুর্তের চেষ্টায় বিমান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালায় তৌকির।’