রংপুরের পীরগাছায় লাইনচ্যুত ট্রেনের বগির উদ্ধার তৎপরতা অবশেষে শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনার ১৪ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটায় এ উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হয়। ফলে এক নম্বর লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় নম্বর লাইনটি সচল করার চেষ্টা করছে।
পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ইউসুফ আলী জানান, মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় সান্তাহার থেকে লালমনিরহাটগামী পদ্মরাগ মেইল আপ ট্রেনটি পীরগাছা স্টেশনে পৌঁছায়। বিরতির পর যাত্রা শুরু করলে আউটার সিগন্যালের কাছে লাইন সেপারেটরের পাত ভেঙ্গে যায়। এতে ইঞ্জিনের পেছনের তৃতীয় বগি থেকে পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, তাদের মালামাল খোয়া গেছে।
স্টেশন মাস্টার আরো জানান, ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়া সারাদেশের সাথে আন্তঃনগর রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, বুড়িমারি এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, মেইল ট্রেন করতোয়া, পদ্মরাগ, রামসাগর, কমিউটার ও নাইনটিন আপ ড্রেনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
বিকেল ৪টা থেকে দিবাগত রাত আড়াইটা পর্যন্ত রেলের লালমনিরহাট ডিভিশনের প্রকৌশল বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগ এবং সিগন্যাল বিভাগের প্রায় শতাধিক কর্মী প্রচেষ্টা চালিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত বগিগুলো প্রথম লাইন থেকে দ্বিতীয় লাইনে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়।
এরপর একটি লাইন দিয়ে বিভিন্ন স্টেশনে আটকে থাকা ট্রেনগুলো সচল করার উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় লাইনটি মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় লালমনিরহাট ডিভিশনের পরিবহন ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগের ব্যবস্থাপক আবু হেনা মোস্তফা আলম জানান, ‘দুর্ঘটনার সাথে সাথেই আমরা উদ্ধার তৎপরতার কার্যক্রম শুরু করি। প্রথমে বিকেল সাড়ে ৪টায় লালমনিরহাট থেকে আসা একটি উদ্ধার ট্রেন দিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত বগিগুলোর আগে থাকা একটি বগি কাউনিয়া রেলওয়ে জংশনে সরিয়ে নেই। পরে পার্বতীপুর থেকে আসে উদ্ধারকারী ট্রেন। এ সময় রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের শতাধিক কর্মী একটানা রাত আড়াইটা পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। রাত ২টা ৩৪ মিনিটে আমরা একটি লাইন সচল করতে সক্ষম হই। পরে ওই লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি লাইন, বগি ও সিগন্যাল ত্রুটিসহ বিভিন্ন ত্রটিকে সামনে নিয়ে তদন্ত্র কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কোনো বিভাগের গাফিলতি থাকলে তাকে যথাযথ আইনের আওতায় আনা হবে।’
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহীদুল ইসলাম জানান, ‘দুর্ঘটনার পর বিকেল ৪টা থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় ১১ ঘণ্টা আমরা উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এখন একটি লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু করেছে। বাকি লাইনটিও ভোরের মধ্যে ক্লিয়ার হবে।’