মাদারীপুরের শিবচরকে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হলেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে এখনো ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লাগেনি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে নানাবিধ কারণে মানুষের মৌলিক অধিকার চিকিৎসাসেবা প্রদান দিন দিন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ১৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত শিবচর উপজেলার প্রায় ৪ লাখ লোক ছাড়াও রাজৈর, ভাঙ্গা ও জাজিরা লোকেরাও চিকিৎসাসেবার জন্য ছুটে আসেন ১০০ শয্যা বিশিষ্ট শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এক্ষেত্রে হাসপাতালটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা থাকলে তা যথাযথভাবে ভূমিকা রাখতে পারছে না। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সঙ্কটে জনসাধারণ প্রকৃত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রোগীদের সামাল দিতে প্রতিনিয়তই হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জুনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, জুনিয়র কনসালটেন্ট ইএনটি (নাক-কান-গলা), জুনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু, মেডিক্যাল অফিসার (এনেস্থসিওলজি), মেডিক্যাল অফিসার (ইউনানী) প্যাথলজিস্ট, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারসহ দু’জন সিনিয়র নার্সের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণির সাতটি পদে কোনো জনবল নেই। এদিকে ফিজিওথেরাপি, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং, প্রধান সহকারী, ক্যাশিয়ার, প্রধান সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর ও গার্ডেনারের পদও শূন্য রয়েছে। পরে টিকিট ক্লার্ক পদটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
জরুরি বিভাগের জন্য ডেডিকেটেড বিল্ডিংটি জরুরি সেবা প্রদান মাঝে মাঝে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কক্ষগুলো চিকিৎসকদের জন্য যথাযথভাবে বরাদ্দ হচ্ছে না। অপারেশন থিয়েটার ও পোস্ট-অপারেটিভ রুম প্রস্তুত না হওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সিজারিয়ানসহ অন্য অপারেশনের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে নিরাপত্তা প্রহরীর অভাবে পুরো প্রিমিসেস অরক্ষিত থাকায় কয়েকবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। একইসাথে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর অভাবে হাসপাতালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে জনবল সঙ্কট নিরসনে এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন সাধারণ জনগণ।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা: মো: ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘চিকিৎসকসহ জনবল সঙ্কটের কারণে আমরা খুবই বিব্রতকর অবস্থায় আছি। নিয়মিত অর্ধশতাধিক ভর্তি রোগীসহ বহির্বিভাগে প্রচুর পরিমাণ রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসে। কিন্তু চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে তাদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। তারপরেও আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ফাতিমা মাহজাবিন জানান, ‘এ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা ১০ জন, কবে মাত্র চারজন আছেন। এছাড়া দু’জন সংযুক্তিতে অন্যত্র কর্মরত আছে। মেডিক্যাল অফিসার/সমমানের পদে থাকার কথা ২৫ জন, আছে মাত্র ১৯ জন। এর মধ্যে সংযুক্তিতে অন্যত্র কর্মরত আছে ১১ জন। প্রতিষ্ঠানটিতে মাত্র নয়জন মেডিক্যাল অফিসার বা সমমানের চিকিৎসক কর্মরত আছেন। কনসালটেন্ট থাকার কথা ১০ জন, আছে মাত্র চারজন। প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক পদটি আপাতত শূন্য রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থাকার কথা ২১ জন, আছে মাত্র চারজন। অন্যদিকে অফিস স্টাফ ৫১ জন থাকার কথা আছে মাত্র ২৯ জন, বাকি ২২টি পদ শূন্য।
তিনি বলেন, ‘এত কম সংখ্যক চিকিৎসক, মেডিক্যাল অফিসার, অন্য টেকনিক্যাল হ্যান্ড ও জনবল সঙ্কট নিয়ে জনসাধারণের প্রকৃত চিকিৎসাসেবা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছি। আন্তঃবিভাগ, বহিঃবিভাগ ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম কোনো মতে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। এ সঙ্কট সমাধানে স্বাস্থ্য অধিদফতরে ১৪ জুলাই থেকে একাধিকবার চিঠি দেয়ার পরেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।’
চিকিৎসা সঙ্কট নিয়ে মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা: শরিফুল আবেদীন কমল বলেন,
‘মাদারীপুর জেলার সব হাসপাতালে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। এ নিয়ে বারবার চিঠি দেয়া হয়েছে এবং মৌখিকভাবেও জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে নতুন নিয়োগের কার্যক্রম চলমান।’



