‘নারায়ণগঞ্জে যানজট নিরসন না হলে ব্যবসা বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে’ উল্লেখ করে জরুরিভাবে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ৩৩ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এ দাবিতে রোববার (২৭ জুলাই) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন।
এর আগে ব্যবসায়ী নেতারা জেলা প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় করেন। সেখানে নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজটের কারণগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
জেলা প্রশাসককে দেয়া ব্যবসায়ীদের স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, রোগীসহ প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। শহরের চাষাঢ়া, নিউমার্কেট, কালিরবাজার, মণ্ডলপাড়া মোড়, বঙ্গবন্ধু সড়ক, ২নম্বর রেলগেট, পুলিশ লাইন্স, খানপুর, সদর হাসপাতাল, পঞ্চবটি এলাকা ও পুরাতন কোর্ট এলাকায় ট্রাফিক বিশৃঙ্খলা ও যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে মানুষকে।
চেম্বার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সঠিক পরিকল্পনা ও নজরদারির অভাবে এই জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া অবৈধ পার্কিং, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ট্রাক-লরি চলাচল, রাস্তার ওপর অবৈধ দোকানপাট ও হকারদের অবস্থানের কারণেও সমস্যার অবনতি ঘটছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন , এ অবস্থার দ্রুত উন্নয়ন না হলে ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষাক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব পড়বে। তারা এ সংকট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট সব মহলের সমন্বিত পদক্ষেপ চান। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু বলেন, ‘বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে ভয়াবহ যানজট একটি নিত্যদিনের দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। এ যানজটের ফলে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, রোগীসহ প্রতিটি শ্রেণির মানুষ প্রতিনিয়ত মানসিক অস্বস্তি, সময় ও অর্থের অপচয় এবং নানা দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ স্থানের প্রায় প্রত্যেকটি স্পটে ও বাজারের সামনে এ সমস্যা বিরাজমান। বিশেষ করে চাষাঢ়া মোড় থেকে চাঁদমারী স্ট্যান্ড, ২ নম্বর রেলগেইট, পুলিশ লাইন্স, খানপুর রোড, ১ নং রেইলগেইট, কালিরবাজার, পঞ্চবটি মোড় ও শিবু মার্কেটেও যানজটের পরিস্থিতি ক্রমাগত ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এসব স্থানে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাব, অবৈধ পার্কিং, রিক্সা ও অবৈধ যানবাহন, অবৈধ ভাবে ফুটপাত ও রাস্তা দখল, অটোরিক্সা ও নিয়ম না মানা চালকদের কারণে শহরজুড়ে এক অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ শহরে দীর্ঘদিন ধরে যানজটের সমস্যা রয়েছে। ছোট্ট এই শহরে জনসংখ্যা খুব বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় সড়ক কম। শহরে প্রচুর অটোরিকশা বৃদ্ধি পেয়েছে। তা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি। নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, মাহে রমজান মাসে যানজট নিরসনে আমাদের সহায়তা করার জন্য। শহরে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত জনবল নাই। যানজট নিরসনে দ্রুত সবাইকে নিয়ে একটা কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির পরামর্শক্রমে দ্রুত বিভিন্ন কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। তবে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীকে সবার আগে সচেতন হতে হবে।’
মতবিনিময় সভায় বিকেএমইএ, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ নীট ডাইং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পাল্স অ্যান্ড লেনটিল ক্রাশিং মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যাল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস রি-সাইকেলিং কালার ফাইবার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় পর্যায়ের ৩৩টি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরো উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএ সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরশেদ সারোয়ার সোহেল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আলমগীর হুসাইনসহ প্রমুখ।