আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে রাজনৈতিক দলগুলো আরো কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে কয়েকটি রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি তুলছে। জনগণ এ পদ্ধতির সাথে পরিচিত নয়।’
শনিবার (২৩ আগস্ট) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর মুক্তমঞ্চে জেলা বিএনপির উদ্যোগে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী প্রশ্ন করে বলেন, ‘পিআর কী জনগণ বলতে পারবে? এটা কি নারিকেল তেলের মতো মাথায় দেয়? যারা ধর্মীয় রাজনীতি করে তাদেরও কেউ কেউ এ দাবি করছে। এ পদ্ধতিতে ভোটাররা প্রার্থী নয়, দলকে বেছে নিলে দলগুলো কর্তৃত্ববাদী হয়ে পড়বে। বিতর্কিত ও অর্থবিত্তশালী ব্যক্তিরা সহজেই এমপি হয়ে যেতে পারবেন। অথচ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কেউ চিনবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা–বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। অথচ শেখ হাসিনার মতো শকুনীরা দেশকে খুবলে খুবলে খেয়েছে। সাড়ে আট লাখ বছর আগে মানবসমাজে যে হিংস্রতা ছিল শেখ হাসিনা সে হিংস্রতা চালিয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের ওপর। ভয়ঙ্কর রক্তপিপাসু হাসিনাকে বাংলাদেশের মানুষ পরাজিত করেছে। সে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে।’
যে ভোটাধিকারের জন্য এত সংগ্রাম ও রক্ত বিলানো হলো, তা নিয়ে লুকোচুরি হচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘আমরা ভুলে যাইনি যে, একবার সংস্কারের নামে দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মী—ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, জাকির, সুমনসহ অনেককে গুম ও খুন করা হয়েছে। ভয়াবহ দুঃশাসন কায়েম করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা হয়েছে।’
‘আমরা একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে আইনের শাসন থাকবে, মানুষ ভয়–ভীতির বাইরে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারবে। এজন্যই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কচি প্রাণ মীর মুগ্ধ জীবন দিয়েছে, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ বুক পেতে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছে। এই রক্তের দাম রাখতে হবে,’ বলেন তিনি।
বিএনপির সিনিয়র এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সমাজের ভালো ও সৎ মানুষদের বিএনপির সদস্য করতে হবে। শিক্ষক, উকিল, চাকরিজীবী, পোশাক শ্রমিকসহ যাদের সমাজে সুনাম রয়েছে, তাদের দলে নিতে হবে। কোনো চাঁদাবাজ, দখলবাজ কিংবা যাদের দেখে মেয়েরা ভয় পায়, তাদের সদস্য করা যাবে না।’
রিজভী বলেন, ‘দেশব্যাপী এক কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়েছে। বিএনপি একটি বৃহৎ ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। তবে ফাঁক–ফোকর দিয়ে কিছু দুষ্কৃতিকারী ঢুকে পড়তে পারে। এজন্য সজাগ থাকতে হবে যাতে কোনো সন্ত্রাসী, খুনি, চাঁদাবাজ বা আওয়ামী লীগের দোসর বিএনপিতে ঠাঁই না পায়।’
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘আগামী রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি আসন বিএনপিকে উপহার দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি এ দেশে কার্যকর হবে না। পাশের দেশ নেপালে এ পদ্ধতিতে সরকার দুই মাসও টিকে না। নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংস্কার সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের কোনো কর্মী বা দোসরকে বিএনপির সদস্য করা যাবে না। সকল সংস্কারের কথা ৩১ দফায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তৃতা করেন কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো: মোস্তাক মিয়া।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: সিরাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো: জহিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আহসান উদ্দিন খান শিপন, শেখ মোহাম্মদ শামীম, যুবদল নেতা শামীম মোল্লা ও ছাত্রদল নেতা সমীর চক্রবর্তী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা শেষে প্রধান অতিথি সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।