সিলেট নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের তাণ্ডবের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক বাদি হয়ে একটি এবং বন্দরবাজারের ব্যবসায়ী আরেকটি মামলা করেন। পৃথক দুই মামলায় সিলেট জেলা বাসদের আহ্বায়ক আবু জাফর ও সদস্য সচিব প্রণব জ্যোতি পালসহ নয়জনকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় তাদের আম্বরখানাস্থ দলীয় কার্যালয় থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের সিলেট কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকদের মিছিল থেকে নগরীর বন্দরবাজারের কোর্ট পয়েন্টসহ বিভিন্ন এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনা ভাঙচুর ও যাত্রীদের মারধর করা হয়। এ সময় উচ্ছৃঙ্খল ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা সিলেট সিটি করপোরেশনে হামলার চেষ্টা চালায়। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুটি মামলা করা হয়েছে। ফলে নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সেদিনের তাণ্ডবে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে মামলা করতে। তাহলে পুলিশ ব্যবস্থা নিবে। অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলায় জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না।‘
ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের বিবৃতি-
এদিকে বৃহস্পতিবারের ব্যাটারি রিকশাচালকদের তাণ্ডবের ঘটনায় একটি বিবৃতি দিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা সভাপতি আবু জাফর এবং সাধারণ সম্পাদক ও রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ সিলেট মহানগর সভাপতি প্রণব জ্যোতি পাল।
যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘সিলেটসহ সারাদেশের প্রায় ৬০ লাখ ব্যাটারিচালিত যানবাহন শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা রক্ষার আন্দোলনে কোনো সেক্টরের শ্রমিক কিংবা যাত্রী সাধারণ কেউই প্রতিপক্ষ নয়।
শুক্রবার গণমাধ্যমে প্রেরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়- প্রায় ৬০ লাখ ব্যাটারিচালিত যানবাহন শ্রমিক তার উপর নির্ভরশীল আড়াই কোটি নির্ভরশীল মানুষের পক্ষে সংগ্রাম পরিষদের যৌক্তিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ইতোমধ্যে ‘বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ চূড়ান্তকরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। ঠিক এ সময়ে সিলেট নগরীতে ব্যাটারিচালিত যানবাহন নিষিদ্ধ কিংবা অদৃশ্য ঘাতক উল্লেখ করা সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের পরিপন্থি। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য এককভাবে কোনোভাবেই ব্যাটারিচালিত যানবাহন দায়ী নয়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যানুযায়ী ৮৫ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়ে থাকে বিভিন্ন পরিবহন দ্বারা। মাত্র ১৫ শতাংশ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় ব্যাটারিচালিত যানবাহন দ্বারা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নানা সূত্র মতে সারাদেশে ব্যাটারিচালিত যানবাহন প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়। অন্যদিকে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রতিদিনের সক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট। তাহলে মাত্র আড়াই শতাংশ বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় সারাদেশের ব্যাটারিচালিত যানবাহনের জন্য।
এ বিদ্যুৎ ব্যবহারের মাধ্যমে সারাদেশের ৩ কোটি মানুষের জীবিকা এবং ২ কোটি মানুষের যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত হয়। ব্যাটারিচালিত যানবাহন পরিবেশ বান্ধব ও সাশ্রয়ী।
তেল চালিত গাড়ি দেশের কার্বন নিঃসরণের প্রায় ১৬ শতাংশ পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী, যা দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। যার কারণে গোটা দুনিয়াতে তেল চালিত গাড়ির পরিবর্তে ইবি বেইক্যাল বা বিদ্যুৎ চালিত যানবাহন উৎসাহিত করা হচ্ছে।
শহরের যানজটের প্রধান কারণ অবৈধ পার্কিং, রাস্তা ও ফুটপাত দখল, প্রাইভেট গাড়ির আধিক্য, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা পরিবহন শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এর অগণতান্ত্রিক ধারা সংশোধনসহ অন্য ন্যায্য দাবিতে আমরা যেমন একাত্ম থাকি একইভাবে আমরা সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের নিবন্ধন, শ্রমিকদের লাইসেন্স দাবিতেও একাত্মতা প্রকাশ করি।
তারা বলেন, বৃহস্পতিবার সিএনজিচালিত গাড়ি ভাঙচুরের তীব্র নিন্দা জানাই। ন্যায্য ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য তৃতীয় কোনো পক্ষের উস্কানিতে শ্রমিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির লক্ষ্যে এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে। প্রত্যেক শ্রমিক সংগঠন ন্যায্য দাবিতে নিয়মতান্ত্রিক-গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অধিকার রয়েছে। কারো উস্কানি কিংবা ফাঁদ পা নিতে সকল শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানাই।