৪৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী

ভাসানীর মাজারে মানুষের ঢল : মহান নেতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ

যথাযোগ্য মর্যাদায় টাঙ্গাইলে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত।

মালেক আদনান, টাঙ্গাইল

Location :

Tangail Sadar
ভাসানীর মাজারে মানুষের ঢল : মহান নেতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ
ভাসানীর মাজারে মানুষের ঢল : মহান নেতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ |নয়া দিগন্ত

যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে টাঙ্গাইলে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে।

এ উপলক্ষে সোমবার (১৭ নভেম্বর) ভোর থেকে টাঙ্গাইলের সন্তোষে ভাসানীর মাজারে মানুষের ঢল নামে। ফুলে ফুলে ঢেকে যায় ভাসানীর মাজার। বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মানুষ স্মরণ করে মহান এই নেতাকে।

সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মওলানা ভাসানীর মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ ও মাজার জিয়ারতের মধ্যদিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো: আনোয়ারুল আজীম আখন্দ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, প্রোভোস্ট, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, অফিস প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।

এরপর ভাসানীর পরিবার, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব, ন্যাপ ভাসানী, ভাসানী পরিষদ ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসস্থ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এছাড়া সকাল ৮টার দিকে তবারক বিতরণ করা হয়।

অপরদিকে বিএনপি, জামায়াত, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ভাসানীর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কয়েকদিন আগে থেকেই ভাসানাীর ভক্ত-অনুরাগীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সন্তোষে এসে সমবেত হন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ভাসানীর মাজার প্রাঙ্গনে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীনের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল।

এছাড়া গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের নেতা ভিপি নুরুল হক নুর ভাসানীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। জামায়াতে ইসলামী টাঙ্গাইল জেলা শাখার আমীর আহসান হাবিব মাসুদের নেতৃত্বে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আজ খুব ভালো লাগছে। মজলুম জননেতার কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পেরেছি। ইতোপূর্বে এই ভাসানীর মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে এসেও আমি রক্তাক্ত হয়েছি। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আমাদের ১২ জন কর্মী শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই সহস্রাধিক কর্মী।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে যারা খুন করেছে তাদের প্রত্যেকের বিচার হতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে ফ্যাসিবাদী কায়দায় নির্বিচারে মানুষ করা হয়েছে, আদালতে তার বিচার চলছে। আমরা মনে করি আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করেই এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শেখ হাসিনাসহ তিন জনের ফাঁসির রায় হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে।

মওলানা ভাসানীর মাজারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে টাঙ্গাইল শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা শাখা আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা সভাপতি সাইফুর রহমান রেজা। সভায় বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বহ্নিশিখা জামালী ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ অন্য নেতারা বক্তব্য রাখেন।

মওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে টাঙ্গাইলের সন্তোষে সাত দিনব্যাপী ‘ভাসানী মেলা’ চলছে। গত ১১ নভেম্বর এ মেলার উদ্বোধন করেন ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো: আনোয়ারুল আজীম আখন্দ।

এছাড়া প্রতি বছরের ন্যায় এবারো মওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশন ও খোদা-ই-খেদমতগার দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ, ওরশ, স্মরণ সভা ও গণভোজসহ সাত দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

উল্লেখ্য, মওলানা ভাসানী ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। পরে তাকে টাঙ্গাইলের সন্তোষে দাফন করা হয়। মওলানা ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তবে সিরাজগঞ্জে জন্ম হলেও তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে। তিনি তার কৈশোর-যৌবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।