ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত এখন মানব ও মাদক পাচারের একটি ‘নিরাপদ রুটে’ পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই সীমান্ত পেরিয়ে আসছে কোটি কোটি টাকার মাদকদ্রব্য। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ এই সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে ভারতে। একইসাথে ভারত থেকে শতশত মানুষ অবৈধভাবে প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। প্রতিদিন বিজিবির হাতে ধরাও পড়ছে। যা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের মহেশপুর সদর দফতর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গত ১৫ মাসে ২০২৪ সালের ০১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মহেশপুর ও জীবননগর সীমান্ত থেকে প্রায় ১১৯ কোটি ৬৪ লাখ ৮৩ হাজার ২০২ টাকার মাদকদ্রব্য জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে। ধ্বংসকৃত মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ভারতীয় ২৫ হাজার ৮১৩ বোতল ফেনসিডিল, ৩৮ হাজার ৯০০ বোতল মদ, এক লাখ ৩০ হাজার ৯৫১ কেজি গাজা, ৬৫ হাজার ৯৭৪ পিস ইয়াবা, ৩৬ হাজার ৭৯১ কেজি হেরোইন, ৭৮ হাজার ৯৪০ কেজি কোকেন, ২১ হাজার ৩১৬ পিস ভায়াগ্রা, ৬ হাজার ২৯ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস ও ২৯ বোতল এল এসডি।
বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে জানা গেছে, মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে সক্রিয় একাধিক পাচারকারী চক্র দীর্ঘদিন ধরে নির্বিঘ্নে মাদক ও মানব পাচারের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এসব কর্মকাণ্ডে সীমান্ত এলাকার সাধারণ মানুষ চরমভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সীমান্তে মাঝে মধ্যেই মাদকসহ কিছু পাচারকারী ধরা পড়লেও, বড় ধরনের চক্রগুলো থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। অতি সম্প্রতি মাদক পাচারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলি আহতের ঘটনাও ঘটেছে সীমান্ত এলাকায়।
স্থানীয়দের দাবি, এতো বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ হলেও মামলায় আসামি থাকে না বললেই চলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাদক ‘পরিত্যক্ত অবস্থায়’ উদ্ধারের কথা বলা হয়। এতে নানা ধরণের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে, সম্প্রতি মাসগুলোতে কয়েক হাজার মানুষকে এই সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পারাপারের অভিযোগ ওঠেছে।
সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন দুই বাংলাদেশি নাগরিক, যা পরিস্থিতিকে আরো উদ্বেগজনক করে তুলেছে।
মহেশপুর সীমান্ত এলাকায় বিজিবির পক্ষ থেকে নিয়মিত টহল ও অভিযান চালানো হলেও, পাচার থেমে নেই। স্থানীয়দের বক্তব্য ‘যদি সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা ও নজরদারি থাকে, তাহলে প্রতিদিনই কীভাবে এ পরিমাণ মাদক প্রবেশ করে? মানুষ পাচার হয় কীভাবে?’
সীমান্তে বিজিবির কড়া নজরদারি রয়েছে। এত কড়াকড়ির মাঝেও মাদক ও মানুষ পাচার হয় কীভাবে? এমন প্রশ্ন অভিজ্ঞ মহলেরও।