বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। যে কোন মূল্যে এই ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ খ্রিস্টান সকলে মিলে এই ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে হবে। যদি ষড়যন্ত্রকারিরা সফল হয়, তাহলে মনে রাখবেন আমাদের জন্য ভয়ংকর পরিণতি হতে পারে। বাংলাদেশের আকাশে যে কালো মেঘ ছিল তা সামান্য দূরে সরে গিয়েছে। সে মেঘ যে আবার আসবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। যদি আবার আসে তাহলে সকলে মিলেও মোকাবিলা করা যাবে ন, যদি না আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। এখনি তারা বলে, কাছেই আছি চট করে আসব। নাম লিখে রাখতেছি, চিনে রাখতেছি, প্রত্যেকের বিচার করব। এর অর্থ দাড়ায়, আমরা আপনারা কেউ নিরাপদ নই। কাজেই নিজেদের স্বার্থে, নিরাপত্তার স্বার্থে ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।
শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও শহরের সালন্দর কামিল মাদরাসা ঈদগা মাঠে জামায়াতে ইসলামী ঠাকুরগাঁও-১ নির্বাচনী আসন কর্তৃক আয়োজিত উলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসাবে আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী এসব কথা বলেন।
শামীম সাঈদী আরো বলেন, যে দেশে যে মায়ের কোলে জন্ম নিয়ে হেটে বড় হয়েছি, সেই মাটি ও দেশকে ভালবেসে যদি প্রয়োজন হয়, তবে আবারো জেলে যাবো। আবারো রক্ত দিব, প্রয়োজনে আবু সাঈদ, মুগ্ধের মতো আবারো আমরা জীবন দিব। আবু সাঈদ, মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ। এই যুদ্ধ চলবে ভোট পর্যন্ত। এই ভোট আমাদের বিজয় নিয়ে আসবে। যারা আল্লাহকে ভয় করে, যারা শরীয়াহ আইন মানে, যারা রাসূল (সা:) নীতিকে অবল্বন করে, যারা গরীব দু:খি মানুষের পাশে থাকে, যারা দুর্নীতির সাথে থাকে না, চাঁদাবাজির সাথে থাকে না, ইভটিজিংয়ের সাথে থাকে না, সেই সমস্ত ব্যক্তিদের সাথে যদি আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে থাকেন, তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন, তাহলে দেশটা সোনার বাংলা হবে ইনশাআল্লাহ্। বিগত ৫৪ বছরে যারা ক্ষমতায় এসেছে, ক্ষমতায় আসার আগে তারা বলে, বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর বানাবো, কানাডা বানাবো, মালয়েশিয়া বানাবো। ক্ষমতায় এসে কাডানায় নিজেদের বেগমপাড়া বানায়, বাংলাদেশ যেখানে, সেখানেই থেকে যায়। প্রয়োজনে ভারতে পালায়, বাংলাদেশকে ডুবিয়ে দিয়ে চলে যায়।
ঠাকুরগাঁও-১ আসনে জামায়াত প্রার্থী দেলাওয়ার হোসেনের পক্ষে আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট চেয়ে শামীম সাঈদী বলেন, দেলাওয়ার হোসেন শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, এরকম মানুষ খুজে পাওয়া মুশকিল। শিবিরের সভাপতি হওয়া চারটিখানি কথা না। তিনি একজন নির্যাতিত মজুলম ব্যক্তি, আপনাদের জন্য যোগ্য প্রার্থী। আপনারা এবার নারী-পুরুষ ভোটার সমান। আমরা নারীদের সম্মান করি, মর্যাদা দেই। মা-বোনেরা আপনারা জানেন কারা আপনাদের উত্যক্ত করে, কারা আপনাদের সম্মান করে। আপনারা সিদ্ধান্ত নিবেন, স্বামী সন্তান নিয়ে নিরাপদে সংসার জীবন যাপন করবেন, নাকি চাঁদাবাজদের চাঁদা দিবেন। আপনারা নামাজীর পক্ষে থাকবেন, নাকি যারা শরীয়াহ মানে না তাদের পক্ষে থাকবেন। মনে রাখবেন আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে, ইসলামের পক্ষে, কোরআনের পক্ষে। আমরা ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করিনা। প্রয়োজন হলে মাথায় টুপি আর হাতে তসবি নেই না। সংতরা, আগামী নির্বাচনে দলে দলে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিবেন। ভোট দিয়ে কেন্দ্রের পাশে অবস্থান করবেন, ভোট গণনা হবে, বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরবেন ইনশাআল্লাহ।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত ঠাকুরগাঁও-১ (সদর) আসনে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী দেলাওয়ার হোসেন বলেন, একমাত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষেই সুদ, ঘুষ, দুর্নীতিমুক্ত সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। আগামীতে যদি পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলে জামায়াতে ইসলামীর দ্বারাই সেই পরিবর্তন আনতে হবে। গ্রামে গঞ্জে, পাড়া মহল্লায় সাধারণ মানুষের মুখে মুখে আজ জামায়াতে ইসলামীর স্লোগান উঠেছে। তারা স্রোতের ন্যায় জামায়াতের মিটিং মিছিলে ছুটে আসছে। তারা বলছে আমরা জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দিব। কিন্তু সেই ভোট আপনাদেরকে রক্ষা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র কোরআনের কথা বলার অপরাধে, একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখার অপরাধে, জামায়াতে ইসলামী করার অপরাধে আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, অধ্যাপক গোলাম আযম, আলী আহসান মুজাহিদসহ জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে শহীদ করা হয়েছে। বাংলাদেশে ৮৫ ভাগ মুসলমানের দেশে যারা বিগত সময়ে ক্ষমতায় ছিল তারা নামে মাত্র মুসলমান ছিল। কিন্তু আলেমদের পক্ষে, মুসলমানদের পক্ষে কোন কাজ করেনি। গত ১৬ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা এ দেশ থেকে ইসলামকে নির্মুল করে দেয়ার জন্য সকল ষড়যন্ত্রে তারা লিপ্ত হয়েছিল। এদেশের আলেম উলামাদের ওপর ব্যপক জুলম নির্যাতন চালিয়েছিল তারা। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে রাতের অন্ধকারে হাজার আলেমদের নির্বিচারে শহীদ করেছিল। আমাদের আলেমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেননি। কুরআনের মাহফিল স্বাধীনভাবে করতে পারেনি। মসজিদগুলোতে স্বাধীনভাবে খুৎবা দিতে পারেনি, নির্দিষ্ট কথা বলতে তাদের বাধ্য করা হয়েছিল। কোরআন-হাদীস রাখার অপরাধে তাদের গ্রেফতার করে, জঙ্গি নাটক সাজিয়ে বছরের পর বছর জেলখানায় বন্দী করে রাখা হয়েছিল।
ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ কফিল উদ্দিন আহাম্মদের সভাপতিত্বে ও শহর আমির অধ্যক্ষ মাওলানা শামসুজ্জামান শাহ শামীমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও সাবেক ঠাকুরগাঁও জেলা আমির মাওলানা আব্দুল হাকিম, বর্তমান জেলা আমির অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন প্রধান, জেলা উলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি মাওলানা ফজলে রাব্বী মোর্তজাবী, ঠাকুরগাঁও সালন্দর মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা রফিকুল ইসলাম, জামায়াতের সদর থানা আমির মাওলানা মিজানুর রহমান, ভূল্লী থানা আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, রুহিয়া থানা আমির আব্দুর রশিদ প্রমুখ।



