চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশী যুবক শহীদুল ইসলাম শহিদের (৩২) লাশ ঘটনার ছয় দিন পরও ফেরত পায়নি তার পরিবার।
লাশ না পাওয়ায় নিহতের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন স্ত্রী, মা-বাবা ও স্বজনরা।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) গয়েশপুর গ্রামে শহীদুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার প্রায় নির্বাক হয়ে পড়েছেন স্বামীর মৃত্যুতে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে স্বজন হারানোর বেদনা ও লাশ ফেরত না পাওয়ার অনিশ্চয়তা তাদের আরো কষ্ট দিচ্ছে।
এর আগে, শনিবার (২৯ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার গয়েশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন শহিদুল ইসলাম শহিদ।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলে শহীদুল ইসলাম শহিদ সীমান্তের ৭০ নম্বর মেইন পিলারের কাছে গরুর জন্য ঘাস কাটতে গেলে বিএসএফ সদস্যরা তাকে ধরে ফেলে। পরে খুব কাছ থেকে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে এমন দাবি করেন ভারতের কৃষ্ণগঞ্জ এলাকার পরিচিতজনরা।
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলা-ভিত্তিক বিএসএফের ৩২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডেন্ট সুজিত কুমার দাবি করেন, মাদক বহন করে বাংলাদেশে ফেরার সময় দু’জন বাংলাদেশীকে ভারতীয় সীমান্তের ভেতর (৭০ নম্বর পিলার থেকে প্রায় ২০০ গজ) থামতে বলা হয়। তাদের একজন হাসুয়া (ঘাস কাটার কাস্তে) দিয়ে বিএসএফ সদস্যদের ওপর চড়াও হন। আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়লে একজন গুলিবিদ্ধ হন।
ঘটনার পর প্রথমে বিএসএফ শহীদুলকে আহত দাবি করলেও পরে রাত ৮টার দিকে বিজিবিকে জানানো হয় তিনি মারা গেছেন।
৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল আলম জানান, শহীদুলের লাশ ভারতের কৃষ্ণগঞ্জ থানা পুলিশ প্রথমে হেফাজতে নেয়। পরদিন ৩০ নভেম্বর দুপুরে কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে হাসপাতালের হিমঘরে লাশ সংরক্ষণ করা হয়।
লাশ হস্তান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বিএসএফকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছি। তারা জানিয়েছে, লাশ হস্তান্তরের জন্য ভারতীয় পুলিশের অনুমতি এখনো পাওয়া যায়নি। অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত লাশ ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব
নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিজিবি নিয়মিতভাবে বিএসএফের সাথে যোগাযোগ রাখছে এবং ভারতীয় পুলিশ ছাড়পত্র দিলেই লাশ বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।’
নিহত শহীদুলের বাবা লস্কর আলী বলেন, ‘আমাদের ছেলে মারা গেছে ৬ দিন হচ্ছে। এখনো লাশটা দেখারও সুযোগ হয়নি। কবে ফিরবে তাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।’
গ্রামবাসী ও স্বজনরা অভিযোগ করেন, সীমান্তে বাংলাদেশীদের একের পর এক হত্যার ঘটনা থামছে না। আবার একেকটি পরিবারকে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে লাশ ফেরত পেতে দিনের ধরে দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ময়েন উদ্দিন ময়েন বলেন, ‘মৃত্যুর ৬ দিন পরও লাশ ফেরত না পেয়ে নিহতের স্বজনেরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন।’
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি-তদন্ত) রিপন কুমার দাস বলেন, ‘লাশ কবে নাগাদ
ফেরত আসবে সে ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো সংবাদ নেই।’
জানা যায়, ঘটনার পর গয়েশপুর সীমান্ত এলাকাজুড়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা অব্যাহত বিএসএফ নির্যাতন বন্ধে দু’ দেশের প্রশাসনের আরো সক্রিয় ভূমিকা কামনা করছেন।



