টঙ্গীতে ছুরিকাঘাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে হত্যা, ৪ ছিনতাইকারী গ্রেফতার

‘প্রথমে কাওছার আহম্মেদ পলাশকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যর ভিত্তিতে ছুরি ব্যবহারকারী ছিনতাইকারী রাশেদকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা কলেজ শিক্ষার্থী মাহফুজকে গুরুতর জখমের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করেন।’

মোহাম্মদ আলী ঝিলন, গাজীপুর

Location :

Gazipur
টঙ্গীতে ছুরিকাঘাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে হত্যা, ৪ ছিনতাইকারী গ্রেফতার
টঙ্গীতে ছুরিকাঘাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে হত্যা, ৪ ছিনতাইকারী গ্রেফতার |নয়া দিগন্ত

টঙ্গীর আব্দুল্লাহপুরে ছিনতাইকারীর ছুরিকঘাতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চার ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১।

শনিবার (১২ জুলাই) টঙ্গীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাব ।

গ্রেফতাররা হলেন রাফসান জানি রাহাত(২৮), রাশেদুল ইসলাম(২০), কাওছার আহম্মেদ পলাশ(২৩) ও রাকিব ইসলাম(২৬)।

এর আগে বুধবার (৯ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে আব্দুল্লাহপুর ফ্লাইওভার থেকে সেনা কল্যাণ ভবনগামী সংযোগ সড়কে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমানের(২১) মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় ভিকটিমের দুলাভাই জসিম অজ্ঞাতদের আসামি করে টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলা করেন।

নিহত মাহফুজুর রহমান বরিশাল সদর উপজেলার হায়াতসার গ্রামের ফরিদ উদ্দিনের ছেলে। সে বরিশালের সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের অনার্স(সম্মান) শ্রেণীর অর্থনীতি বিভাগের ২০২২-২০২৩ সেশনের শিক্ষার্থী।

র‌্যাব-১ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সালমান নূর আলম ছুরিকাঘাতে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর দুর্বৃত্তরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। কোনো ধরনের ক্লু ছাড়াই ঘটনা অনুসন্ধানে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু হয়। হত্যাকাণ্ডের ২ ঘণ্টা পর ভিকটিমের অ্যান্ড্রয়েড সেট শনাক্ত করে তদন্ত দল। দ্রুত সময়ের মধ্যে র‌্যাব মোবাইলের গ্রাহককে শনাক্ত করে নজরবন্দীতে আনে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় টঙ্গীর মাজার বস্তির চোরাই মোবাইল ব্যাবসায়ীর কাছ থেকে ভিকটিমের সেটটি ৩৫০০ টাকা দিয়ে কিনেন।

এক পর্যায়ে মোবাইলের গ্রাহককে সন্দেহভাজন মোবাইল চোর চক্রের ছবি দেখালে সে মোবাইল বিক্রেতা রাকিবকে শনাক্ত করে। পরে র‌্যাব মোবাইল বিক্রেতাকে গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে গ্রেফতার করে। মোবাইল বিক্রেতা রাকিব প্রাক্তন মাদক ব্যাবসায়ী এবং বর্তমানে সে ছিনতাইকারীদের ব্যাবহার করে কম মূল্যে মোবাইল সংগ্রহ করেন। পরে গ্রাহকদের কাছে লাভজনক মূলে বিক্রি করেন। ছিনতাইকারীরা তার কাছ থেকে সুইচ গিয়ারসহ অন্য ধারালো সরঞ্জাম সংগ্রহ করেন। চোরাই মোবাইল বিক্রেতা রাকিবের কাছে একটি ছিনতাই চক্র সর্বমোট তিনটি মোবাইল সেট বিক্রি করেন।

তিনি আরো জানান, প্রথমে কাওছার আহম্মেদ পলাশকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যর ভিত্তিতে ছুরি ব্যবহারকারী ছিনতাইকারী রাশেদকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা কলেজ শিক্ষার্থী মাহফুজকে গুরুতর জখমের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করেন। এক পর্য়ায়ে তাদের সাথে জড়িত অন্য ছিনতাইকারী এবং ছিনতাইয়ের সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল চালক রাফসান জানি রাহাতের সন্ধান দেন। একইদিনে চালক রাহাতকেও গ্রেফতারসহ একটি ছিনতাই চক্র সম্পূর্ণ গ্রেফতার হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেন তারা পেশাদার ছিনতাইকারী এবং একই দিনে তারা রাজধানীর হাউজ বিল্ডিং এবং কুর্মিটোলা এলাকায় আরো দুটি মোবাইল ছিনতাই করেন। ছিনতাই করার সময় তারা সংঘবদ্ধভাবে কাজ করেন। ছিনতাই করার পূর্বে তারা মাদকসেবন করে আসেন এবং চোরাই মোবাইল বিক্রেতা রাকিবের কাছ থেকে ধারালো অস্ত্র সংগ্রহ করেন। পলাশ বিভিন্ন ভিকটিমের ব্যক্তিগত মোবাইল, মানিব্যাগ ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী সংগ্রহ করেন। সাগর ভিকটিমকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখান এবং তাদের কথা না শুনলে ভিকটিমকে শরীরে আঘাত করে তার কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করেন। তারা স্বীকার করেন দুটি স্থানে ভিকটিমের সাথে তাদের হাতাহাতি হলে তার ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেন। ছিনতাইকৃত তিনটি মোবাইল ঘটনার প্রায় ২ ঘণ্টা পর রাকিবের নিকট হস্তান্তর করেন। গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।