রুহুল কবির রিজভী

চাঁদাবাজ দখলবাজ বিএনপির সদস্য হতে পারবে না

‘ডক্টর ইউনুস সাহেব তো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানুষ। গুণীজন। সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষ। তাকে তো জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী আকাঙ্খা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।’

আব্দুল আজিজ, মৌলভীবাজার

Location :

Maulvibazar
বক্তব্য রাখছেন অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী
বক্তব্য রাখছেন অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী |ছবি : নয়া দিগন্ত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, মব কালচার মানুষের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক তৈরি করে রেখেছে। কেউ অপরাধ করলে আইনের হাতে তুলে দেবেন। একটা মব তৈরি করে উশৃঙ্খল জনতা সংগটিত হয়ে অপরাধীর ওপর আক্রমণ করছেন। বিনা বিচারে কাউকে তো অপরাধী বলা যাবে না। এটা তো আইনের বিধান। আর যদি দেখেন চাক্ষুষ তাহলে পুলিশকে খবর দেন। না হয় তাকে গিয়ে ধরে পুলিশের হাতে দেন। কিন্তু মব তৈরি করে তাকে বেধড়ক পেটানো- এটাতো অপরাধের মধ্যে পড়ে। ৫ আগস্টের পরে মব কালচার এতো বেশি তীব্র আকার ধারণ করলো কেন? এখানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা কোথায়? এটা তো মানুষ আজ জানতে চায়।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুরে মৌলভীবাজারের সাইফুর রহমান অডিটোরিয়ামে জেলা বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, মব কালচারের কারণে প্রতিদিন বিভৎস হত্যকাণ্ড ঘটছে। এটাতো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা না। মানুষ প্রত্যাশা করে শেখ হাসিনার সেই দুঃশাসন, সেই কালো কানুন, সেই ভয়াবহ অবস্থায় সন্তানকে তার মায়ের কাছ থেকে তুলে নিয়ে গেছে, স্বামীকে তার স্ত্রীর কাছ থেকে তুলে নিয়ে গেছে। অদৃশ্য করে দিয়েছে, গুম করেছে; এখন পর্যন্ত কোনো হদিস নাই। এই সিলেটের ইলিয়াস আলী ছিলেন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিল, যে জাতীয় নেতা সে আজ কোথায় কোন অবস্থায় আছে তার কোনো হদিস নেই।

রিজভী বলেন, আজ আমরা শুনি যে, সরকারের মধ্যে অনেক উপদেষ্টা রয়েছেন, তারা নাকি ক্ষমতা প্রলম্ভিত করতে চাচ্ছেন। তারা তাদের লোকজনদেরকে দিয়ে এটা বলাচ্ছেন ফেসবুক স্যোসাল মিডিয়া স্বাভাবিক গণমাধ্যমে বলছেন- তিন বছর থাকা উচিত এই সরকারের, পাঁচ বছর থাকা উচিত। এগুলো বলাচ্ছেন নানাভাবে নানা কায়দায়। কারা বলাচ্ছেন এটা আমরা সবাই জানি। এটা বলে গণতন্ত্রের ক্ষতি করছেন তারা।

তিনি বলেন, সকল রাজনৈতিক দল যারা সংগ্রামে ছিল, আন্দোলনে ছিল এবং এবং তারা বুকচিতিয়ে দাঁড়িয়েছে শেখ হাসিনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে, তাদের সমর্থিত সরকার হচ্ছে ডক্টর ইউনুসের সরকার। সেইখানে এতো দ্বিধা কেন? কোনো কোনো উপদেষ্টার খায়েশ থাকতে পারে ডক্টর ইউনুস সাহেব তো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানুষ। গুণীজন। সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষ। তাকে তো জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী আকাঙ্খা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

বিএনপির সদস্য কারা হবেন- এ বিষয়ে রিজভী বলেন, আগে যারা সদস্য ছিলেন তারা হবেন। সমাজে যারা ভালো মানুষ ভদ্রলোক, যাদেরকে মানুষ দেখলে সম্মান করে তারা। আর দুর্বৃত্ত অনাচারকারী চাঁদাবাজ দখলবাজ বিএনপির সদস্য হতে পারবে না।

তিনি বলেন, আমাদের প্রাথমিক সদস্যর হওয়ার ব্যাপারে আমরা একটা টার্গেট দিয়েছি- কমপক্ষে এক কোটি। যদি আরো বেশি হয় ভালো। আমাদের দলে যারা সদস্য হবেন ১৮ বছর বয়স্ক তাদের সংখ্যা তো কম নয়। যারা ভোটার হতে পারেননি। স্কুলের শিক্ষক কলেজের শিক্ষক মারাসার শিক্ষক রিটায়ার্ড সরকারি কর্মকর্তা, রিটায়ার্ড বেসরকারি কর্মকর্তা এবং চাকরি করেও অনেক প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি করার সুযোগ আছে, যেমন- বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি কলেজের শিক্ষক এ সমস্ত মানুষদেরকে টার্গেট করতে হবে। আপনারা কৃষকদেরকে টার্গেট করবেন। আমাদের মেরুদণ্ড যারা। আপনারা শ্রমিকদেরকে টার্গেট করেন। রিকশাওয়ালাদের টার্গেট করেন। এরা পরিশ্রম করে খায়। এরা সমাজের সব চাইতে যোগ্য মানুষ। এরাই হবে বিএনপির সদস্য। এরাই হবে মূল শক্তি।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপনের সঞ্চালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জি কে গউছ, সহ-সাংগঠনিক মিফতাহ সিদ্দিকী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি এম নাসের রহমান, জাসাসের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলা নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির টিম প্রধান সৈয়দ আশরাফুল মজিদ খোকন।

অনুষ্ঠানে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম নাসের রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন, সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন, সদস্য মৌলভী আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী, আব্দুল মুকিত, মিজানুর রহমান মিজানের সদস্য পদ নবায়নের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রুহুল কবির রিজভী।