পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ধর্মীয় সম্প্রীতিই বাংলাদেশের সৌন্দর্য্য : ফখরুল ইসলাম

বৃহস্পতিবার রাতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এমজেএইচ জামিল, সিলেট ব্যুরো

Location :

Sylhet
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে সিলেট মহানগর জামায়াতের মতবিনিময়কাল বক্তব্য রাখেন ফখরুল ইসলাম
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে সিলেট মহানগর জামায়াতের মতবিনিময়কাল বক্তব্য রাখেন ফখরুল ইসলাম |নয়া দিগন্ত

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের রয়েছে দীর্ঘদিনের ধর্মীয় সম্প্রীতির গৌরবোজ্জল ইতিহাস। জামায়াত সকল ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য একটি মানবিক বাংলাদেশ গঠন করতে চায়। ধর্মের ভিন্নতা থাকলেও আমরা সবাই বাংলাদেশী। এ দেশে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু বলে আর শ্রেণি বিভাজন চলবে না।‘

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন তাদের নাগরিক অধিকার। সেই অধিকার নিশ্চিত করা সকলের দায়িত্ব। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ধর্মীয় সম্প্রীতিই বাংলাদেশের সৌন্দর্য্য। সিলেটে নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠান পালনে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সতর্ক থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জামায়াত ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, মত, পথ নির্বিশেষে সবাইকে নিয়েই দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সবার সাথে মিলেমিশে চলা আমাদের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। আমরা বিগত সময়ে দেখেছি শুধু রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সংখ্যালঘু বলে ভিন্ন ধর্মের লোকদের একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছিল। অথচ ২০২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হিন্দু-মুসলিম ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। গণঅভ্যুত্থানের পর সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে দেশকে যখন অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল তখন জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের ভাইয়েরা মন্দির পাহারা দিয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।’

মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সিলেট জেলা আমির ও জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে (সদর ও মহানগর) জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান।

মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘জামায়াত সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। এ দেশে হিন্দু–মুসলমানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষের ভালোবাসার সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে। সেই বন্ধনকে সুসংহত করতে হবে। যেকোনো অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে পালন করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পাশাপাশি সচেতন নাগরিকবৃন্দকেও এগিয়ে আসতে হবে। জামায়াত মানবতার কল্যাণ সাধন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়। জামায়াতের মানবিক কাজে ধর্মকে ঊর্ধ্বে রাখা হয়। কারণ রাষ্ট্রের কাছে সকল নাগরিকের অধিকার সমান। আমরা একটি বৈষম্যহীন মডেল সিলেট প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আগামী নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে জামায়াত থেকে আমাকে প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে। আমি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের খাদেম হতে চাই। সকলের ভালোবাসা নিয়ে সিলেটের কল্যাণে কাজ করতে চাই।’

নগরীর একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলা সভাপতি গোবিন্দ শ্যাম পুরকায়স্থ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সিলেট জেলা সভাপতি বিজয়কৃষ্ণ বিশ্বাস, পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট মহানগর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মলয় পুরকায়স্থ, পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রঞ্জন ঘোষ, মহানগর সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সিলেট মহানগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডিজি রুমু, কাজলশাহ সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক কৃষ্ণপদ সূত্রধর, পূজা উদযাপন পরিষদ মোগলাবাজার থানা সভাপতি মন মোহন দেবনাথ ও জালালাবাদ থানা সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার দাশ প্রমুখ।

সিলেট মহানগর জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে থেকে উপস্থিত ছিলেন মহানগর নায়েবে আমির ড. নূরুল ইসলাম বাবুল ও সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা ইসলাম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে নগরীর বিভিন্ন মন্দির ও পূজা মন্ডবের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সভায় সিলেট মহানগর ও বিভিন্ন থানা জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।