টানা বৃষ্টিতে পানির নিচে ধান, মিলছে না শ্রমিক

‘বিঘা প্রতি সাত থেকে আট হাজার টাকা দাম দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে বজ্রবৃষ্টির কারণে ধান কাটতে চান না শ্রমিকরা। তাই ফলন ভালো হলেও এবার খুব লসের মুখে পড়তে হবে।’

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা

Location :

Baksiganj
পানিতে তলিয়ে থাকা ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষক
পানিতে তলিয়ে থাকা ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষক |নয়া দিগন্ত

জামালপুরের বকশীগঞ্জে টানা বৃষ্টির কারণে কৃষকের পাকা ধান পানির নিচে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পাকা বোরো ধান মাঠ থেকে ঘরে তুলতে পারছে না কৃষকরা। কোথাও নুয়ে পড়ছে, আবার কোথাও উপায় না পেয়ে আধা পাকা ধান কেটে নিচ্ছেন।

এদিকে বৃষ্টির কারণে শ্রমিক সঙ্কটেও পড়তে হয়েছে তাদের। শ্রমিকের অভাবে পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছে না। ফসলি জমিতেই নষ্ট হচ্ছে ধান। বৃষ্টির পানি ও উজানে পাহাড় ঢলে ধানে পচন ধরার আশঙ্কা করছে কৃষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলায় গত কয়েক দিন থেকে ভারী বৃষ্টি আর বাতাসের কারণে ফসলি জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা পাকা ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও পানিতে তলিয়ে গেছে ধান।

অনেক জমিতে কৃষকরা ধান কেটে বেঁধে জমিতে রাখার পর এখন বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। আধা পাকা ধান বৃষ্টি পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে কেটে ফেলছেন। এতে ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে জানান কৃষকরা। পানির নিচে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে ধান। ফলে শত শত কৃষক এখন দিশাহারা হয়ে পড়ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ১২ হাজারের ৯৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত কৃষক ৭০ ভাগ জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছে। চলতি কয়েক দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার অধিকাংশ বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলেও জানায় কৃষি অফিস।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, অধিকাংশ ফসলি জমি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা বৃষ্টির কারণে কয়েক দিন ধরে ধান কাটা যাচ্ছে না। জমে থাকা পানিতে নষ্ট হচ্ছে পাকা ধান। অন্য দিকে রয়েছে ধান কাটা শ্রমিকের সঙ্কট। ফলে বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।

অনেক কৃষক কোনো উপায় না পেয়ে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে পানি থেকে আধা-পাকা ধান ঘরে তুলতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আবার অনেকে পানি থেকে তোলা ধান বৃষ্টি ও বজ্রপাতকে উপেক্ষা করে মাড়াই করছেন।

সাধুরপাড়া এলাকার কৃষক নাজমুল হুদা বলেন, ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছি। এখন পর্যন্ত পাঁচ বিঘা কেটেছি। ঝড়বৃষ্টিতে ধান মাটিতে পড়ে গেছে। বাকিগুলো এখনো কাটতে পারিনি। এখন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বিঘা প্রতি সাত থেকে আট হাজার টাকা দাম দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে বজ্রবৃষ্টির কারণে ধান কাটতে চান না শ্রমিকরা। তাই ফলন ভালো হলেও এবার খুব লসের মুখে পড়তে হবে।

বাঙ্গালপাড়া গ্রামের কৃষক সালাম বলেন, টানা বৃষ্টির জন্য তড়িঘড়ি করে কিছু জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছি। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি আর বাতাসে আমার পাঁচ বিঘা জমির পাকা ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এখন দ্বিগুণ দাম দিয়ে এ ধান কাটাতে হবে। তাও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। মাটিতে নুয়ে পড়া ধান শ্রমিকরা কাটতে চান না। তার মধ্যে বজ্রবৃষ্টির আশঙ্কায় তারা কাজ করতে চান না। এমনিতে বাজারে ধানের দাম কম। কষ্ট করে ধান ফলিয়ে যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে না খেয়ে থাকতে হবে। এমন অবস্থা থাকলে গো-খাদ্যেরও সঙ্কট দেখা দিবে বলে জানান এই কৃষক।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও স্থানীয় ধান চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হলেও কয়েকদিন থেকে টানা বৃষ্টির জন্য কৃষকদের ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ৭০ ভাগ ধান কাটা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আগাম বন্যা ও ভারী বৃষ্টির জন্য কৃষকদের ৮০ ভাগ ধান পেকে গেলে দ্রুততম সময়ে কাটার পরামর্শ দিয়েছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।