জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, তার দল দেশবাসীকে একটি নতুন বাংলাদেশ ও একটি নতুন সংবিধান উপহার দেবে। এতে নেত্রকোনাবাসীসহ সারা বাংলাদেশের মানুষ উপকৃত হবে।
সেইসাথে তিনি তারা যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে তা সফল করতে এনসিপির হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন।
‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র অংশ হিসেবে রোববার (২৭ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় স্থানীয় পুরাতন ক্যালেক্টরেট মাঠে জেলা এনসিপি আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে এ দেশে রাজনীতির নামে বৈষম্য সৃষ্টি করে জুলুম ও নির্যাতন চলে আসছে। তাই সকল শ্রেণির মানুষের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য তরুণদের নিয়ে এসসিপি গঠন করা হয়েছে। তাই জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। এ জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টিকে সমর্থন, সহযোগিতা ও হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি সাধারণ মানুষের মর্যাদা ও অধিকারের জন্য কাজ করবে। প্রিয় নেত্রকোনাবাসী, আমরা বলছি মুজিববাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছে— বাংলাদেশপন্থী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্যের ও আঞ্চলিকতা অখণ্ডতা রক্ষার জন্য এবং একই সাথে মানবিক মর্যাদা নিশ্চিতের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি কাজ করে যাচ্ছে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানি নেত্রকোনা হাওর অধ্যুষিত এলাকা। নেত্রকোনা বন্যা, দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যায় রয়েছে। একইসাথে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা রয়েছে। আরো রয়েছে কর্মস্থানের অভাব। তাই আমরা একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে চাই। এজন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি আপনাদের হয়ে কথা বলবে। যারা এনসিপির স্থানীয় সংগঠক রয়েছেন, তারা আপনাদের কথা শুনবেন ও কথা বলবেন।’
ইনশাআল্লাহ আমরা আবারো নেত্রকোনায় আসবো। জুলাই ঘোষণা ও জুলাই সনদের দাবিতে আগামী ৩ আগস্ট যে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে সেখানে আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘সংস্কার, বিচার ও নতুন সংবিধান করতে না পারলে হাসিনার মতো ফ্যাসিস্ট, খুনীরা আবোরো ফিরে আসতে পারে। যদি শোষণমুক্ত শক্তিশালী নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই তবে অবশ্যই নতুন সংবিধান করতে হবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে যেসব হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছিল অবশ্যই এর বিচার হবে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পাওয়ার ব্যালেন্সের জন্য পিআর পদ্ধতির নির্বাচন করতে হবে।’
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি লুৎফুজ্জামান বাবরকে আমি পচন্দ করলেও তিনি স্বরাষ্ট প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন যে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান এসছিল তা আমি সমর্থন করি না।’
এনসিপির নেত্রী ডা: তাসনিম জারা নেত্রকোনার নাজিরপুর সাত শহীদদের স্মরণ করে বলেন, ‘এই জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণে যে ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার ছিল তা রাষ্ট্র কর্তৃক করা হয়নি। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে নেত্রকোনা বরাবরই অবহেলিত। যা করা প্রয়োজন ছিল তাও করা হয়নি। আর দুর্নীতির কারণে অকালে বহু প্রাণ ঝড়ে যায়। অনেকেই বলেন, সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলেই ময়মনসিংহে রেফার করা হয়। তাই অনেকে ঠাট্টা করে বলেন, এটি নাকি রেফার্ড হাসপাতাল। আমি এর সমাধানের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চলীয়) সারজিস আলমের সঞ্চালনায় অন্যদের মাঝে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সংগঠক প্রীতম সোহাগ, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম আইনী প্রমুখ।
মঞ্চে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহকে বক্তব্য রাখার জন্য ঘোষণা দেয়া হলেও হঠাৎ তিনি সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বক্তব্য রাখতে পারেননি।
উল্লেখ্য, এই পদযাত্রা ও সমাবেশকে প্রতিহত করার জন্য ঘোষণা দিয়ে হুমায়ুন কবির নামে এক যুবলীগ নেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেয়ায় রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় তাকে নিজ এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। তিনি পূর্বধলা উপজেলার খলিশাউড় ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বাবার নাম আব্দুল মান্নান।