বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে উত্তপ্ত বাজিতপুর

জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদার সমর্থক ২২ নেতাকর্মী অস্ত্রসহ গ্রেফতার

দলীয় মনোনয়নের দাবি জানিয়ে শনিবার বাজিতপুর-নিকলী ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও পয়েন্টে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ইকবাল সমর্থক নেতাকর্মীরা।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদার সমর্থক ২২ নেতাকর্মী অস্ত্রসহ গ্রেফতার
জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদার সমর্থক ২২ নেতাকর্মী অস্ত্রসহ গ্রেফতার |নয়া দিগন্ত

কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা এবং বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মজিবুর রহমান ইকবালের সমর্থকরা।

দলীয় মনোনয়নের দাবি জানিয়ে শনিবার বাজিতপুর-নিকলী ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও পয়েন্টে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ইকবাল সমর্থক নেতাকর্মীরা। একই দিন বিকেলে বাজিতপুরে লাঠি হাতে মিছিল করেন সৈয়দ এহসানুল হুদা সমর্থক নেতাকর্মীরা। মিছিলটিতে নেতৃত্ব দেন সৈয়দ এহসানুল হুদা। দুই সম্ভাব্য প্রার্থীর কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়ায় উভয়পক্ষ। এতে বেশ কয়েকজন আহতও হন।

এ রকম পরিস্থিতিতে রাতে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার সময় উপজেলার নান্দিনা এলাকা থেকে সৈয়দ এহসানুল হুদা সমর্থক ২২জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৬ রাউন্ড গুলিভর্তি একটি বিদেশী পিস্তল ও একটি রামদাসহ বেশকিছু স্টিলের পাইপ দিয়ে তৈরি দেশীয় অস্ত্র।

আটককৃতরা হচ্ছে- হৃদয় আহমেদ (২২), মো: দামমান (১৯), মো: তাওশ আহমেদ (২৩), মিজানুর রহমান (৪০), জামান (১৯), মো: সোহেল মিয়া (৪০), হাফিজুল রহমান অন্তর (২৫), মো: রাব্বি মিয়া (২০), সাকিব (১৮), মো: বাছির (৩৭), মো: মঞ্জিল মিয়া (৩১), মো: এজাহার মিয়া (৪২), আজহার উদ্দিন রিয়াজ (২৭), মো: টিটু মিয়া (৩৫), গোলাম সারোয়ার জিহাদ ওরফ ভুবন (২৫), রুহুল আমীন (৪০), গিয়াস (৩২), মো: জুনায়েদ মিয়া (৩৯), মো: রাজু (২৫), মো: মারুফ হাসান (১৮), মো: ইয়াছিন (৩৬) ও মো: জনি মিয়া (৩০)।

এ ঘটনায় বাজিতপুর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়েরের পর তাদেরকে রোববার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কিশোরগঞ্জ জেলার ৬টি আসনের মধ্যে চারটি আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণা করা হলেও কিশোরগঞ্জ-১ ও কিশোরগঞ্জ-৫ এই দুটি আসনে এখনো দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়নি। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি'র মনোনয়ন তালিকায় দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ছাড়াও মিত্র দলের দুই নেতার নাম আলোচনায় রয়েছে। এদের একজন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা। এক বছর আগে কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে সৈয়দ এহসানুল হুদাকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করার জন্য স্থানীয় নেতৃত্বকে নির্দেশনা দিয়ে এক চিঠি পাঠানো হয়। এরপর থেকে বিএনপির একটি অংশ সৈয়দ এহসানুল হুদার পক্ষে মাঠে নামে। এদিকে এই আসনে আগে থেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে সরব ছিলেন ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল। দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি বাজিতপুর ও নিকলী এই দুই উপজেলার বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন।

তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি।

স্বভাবতই ইকবালকে ঘিরে নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে দুই হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশী সৈয়দ এহসানুল হুদা ও শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল গত শনিবার একই দিন কর্মসূচি দিলে এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বেলা ১টার মধ্যে ইকবাল সমর্থকদের মানববন্ধন কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। কর্মসূচি পালনের সময় বাজিতপুর-নিকলী সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও মোড় ইকবাল সমর্থকরা মিছিল-স্লোগানে মুখরিত করে রাখেন। অন্যদিকে শনিবার বিকালে বা‌জিতপু‌রে সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃ‌ত্বে একটি লাঠি‌মি‌ছিল বের করা হয়। মি‌ছিল থে‌কে শেখ ম‌জিবুর রহমান ইকবা‌লের বিরু‌দ্ধে স্লোগান দেন হুদা সমর্থকরা। প্রায় এক হাজার লোকের মিছিলে হাতে হাতে ছিলো লা‌ঠি‌সোটা। কর্মসূচি পালনের মধ্যেই ঘটে দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা। এ সময় বাজিতপুর বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে ভয়ে দোকানপাটের শাটার লাগিয়ে ফেলেন। শহরজুড়ে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন করে উভয়পক্ষের ৪০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। ভাঙচুর করা হয় কয়েকটি গাড়ি। এ পরিস্থিতিতে কর্মসূচি থেকে সৈয়দ এহসানুল হুদা তার বক্তব্যে শেখ ম‌জিবুর রহমান ইকবালকে হুশিয়ার করে কড়া বক্তব্য রাখেন। দুই পক্ষের এমন মুখোমুখি অবস্থানের কারণে পুরো উপজেলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে অবস্থান করে সেনাবাহিনী। এ রকম পরিস্থিতিতে শনিবার রাতে উপজেলার নান্দিনা এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দেওয়ার সময় একটি বিদেশী পিস্তল ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসহ সৈয়দ এহসানুল হুদা সমর্থক ২২ জনকে আটক করে যৌথবাহিনী।

এ বিষয়ে জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমার মিছিলে কিছু লাঠিসোটা ছিল। মিছিল থেকে বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। যে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। আমার মিছিল থেকে কাউকে আক্রমণ করা হয়নি। সেনাবাহিনীর টহলদলের পাশ দিয়ে মিছিল শেষে আমার লোকজন যাওয়ার সময় তাদেরকে আটক করা হয়। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা আমার জাতীয় দলের কোনো পদ-পদবিধারী বা বিএনপির পদ-পদবীধারী কেউ না। তবে ওরা আমার মিছিলে ছিল।’

এ ব্যাপারে বাজিতপুর থানার ওসি মো: মুরাদ হোসেন বলেন, ‘আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ ২২ জন আটকের ঘটনায় বাজিতপুর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের আদালতে সোপর্দ করার পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’