দেশের ক্ষতি করে কাউকে বন্দরের কোনো টার্মিনাল ব্যবহার করতে দেয়া হবে না মন্তব্য করে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা নিয়ে নেদারল্যান্ডসের এপিএম টার্মিনালসের সাথে নেগোসিয়েশন চলছে। তবে তারা যেটা চাইছে, আমরা তা মানিনি। প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি।’
সোমবার (১০ নভেম্বর) চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে এসে নগরীর পতেঙ্গায় লালদিয়ার চর কনটেইনার ইয়ার্ড উদ্বোধনের সময় এবং বে টার্মিনাল এলাকায় পৃথকভাবে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেতে হলে বন্দরের দক্ষতা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিতে হবে। এ জন্য প্রযুক্তি দরকার, বিনিয়োগ দরকার। বাংলাদেশে বড় বড় খাতে খুব কম বিনিয়োগ হয়েছে। তবে বন্দর সম্প্রসারণ ঘিরে চার থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে।’
লালদিয়া কনটেইনার ইয়ার্ড ছাড়াও উপদেষ্টা বে টার্মিনাল এলাকায় পরিবহন টার্মিনাল, তালতলা কনটেইনার ইয়ার্ড (ইস্ট কলোনি সংলগ্ন) উদ্বোধন করেন। এছাড়া বন্দরের এক্স ওয়াই শেড ও কাস্টমস অকশন শেড পরিদর্শন করেন।
পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, ‘ভবিষ্যতে চাঁদাবাজি হবে কি হবে না আমি তো বলতে পারব না। তবে আমরা যে ব্যবস্থা করছি, পুরোটাই ডিজিটাল করার চেষ্টা করছি। চট্টগ্রাম বন্দরও পুরোটাই ডিজিটাল হবে। তখন আশাকরি চাঁদাবাজি কমে যাবে। চাঁদাবাজি কারা করছে তা আপনারা ভালো করে জানেন। আমি বলতে পারব না। বাট এগুলো কমে যাবে। আমি নাম জানি না, কিন্তু চাঁদাবাজি হচ্ছে। হচ্ছে না? হচ্ছে কি হচ্ছে না আপনারাই বলেন। আমি তো ইনভেস্টিগেট করি না। আমি তো ইনভেস্টিগেটর না।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি প্রথম যখন বে টার্মিনাল এলাকায় এসেছিলাম তখন একটা বিতর্ক ছিল— বে টার্মিনাল করা হবে কি হবে না। দেখলাম জায়গাটি। এখানে ব্রেক ওয়াটার হবে। আমি দেখলাম এটা খুবই আদর্শ জায়গা। চট্টগ্রাম বন্দর প্রধান বন্দর। যদিও আমাদের আরো কিছু বন্দর আছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিন দিন বিজি হচ্ছে। বে টার্মিনাল পুরোনো প্রজেক্ট। আমরা সিদ্ধান্ত দিয়েছি এ টার্মিনাল হবে। এরপর বহুদূর আমরা এগিয়েছি। এখানে দু’টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট করছে। সরকার টু সরকার পদ্ধতিতে এখানে কাজ হবে।’
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘১৭ বছর কথা বলতে পারেনি কেউ। এখন সবাই বলছে। হইচই করবেন এটা স্বাভাবিক। ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের কাজ করছি। কোনো দেশী অপারেটরের সাধ্য আছে? বন্দরকে আপনি আন্তর্জাতিক করবেন না? এটা আমাদের করতে হবে। আমরা কি এখনো পেছনে পড়ে থাকব। আপনারা চান না বাংলাদেশ মডার্ন রাষ্ট্র হোক। মডার্ন রাষ্ট্র করতে হলে ওইদিকে যেতে হবে। দুনিয়া কোথায় চলে গেছে!’
বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘ট্যারিফ বাড়ানোর আগে ব্যবসায়ীসহ বন্দরের সব স্টেক হোল্ডারদের সাথে আমরা কথা বলেছি। শ্রমিকদের সাথেও কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘১৯৮৪ সালের ট্যারিফ দিয়ে ৪০ বছর ধরে বন্দর চলছিল। ৪০ বছর পরে বন্দর তাদের ট্যারিফ হালনাগাদ করেছে। তারপরেও যেহেতু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এসেছে সেটির বিষয়ে আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষকে পর্যালোচনার অনুরোধ জানাবো।’
এ সময় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব নুরুন্নাহার চৌধুরী, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।



