পিরোজপুরে আমনের মৌসুমে জমে উঠেছে বীজতলার ভাসমান হাট

কাউখালীতে যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা ভাসমান ধানের বীজতলার বাজার এখন জমজমাট হয়ে উঠেছে।

কাউখালী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা

Location :

Kaukhali
জমে উঠেছে বীজতলার ভাসমান হাট
জমে উঠেছে বীজতলার ভাসমান হাট |নয়া দিগন্ত

আমন ধান আবাদের মৌসুমে পিরোজপুরের কাউখালীতে জমে উঠেছে বীজতলার ভাসমান হাট। এখন স্থানীয় নদী ও খালের ধারে ভাসমান বীজতলার হাট, যা এখন কৃষকদের আমন আবাদের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছে।

মৌসুমের শুরুতেই বৈরী আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক কৃষকের বীজতলা, ফলে নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চারা সংগ্রহ করছেন তারা। কাউখালীতে যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা ভাসমান ধানের বীজতলার বাজার এখন জমজমাট হয়ে উঠেছে।

সন্ধ্যা নদীতীরবর্তী কাউখালী শহরের দক্ষিণ বন্দর এলাকার চিরাপাড়া সেতুর কাছে নদীর পারে শুক্রবার ও সোমবার সপ্তাহে দু’দিন বসে আমন ধানের বীজতলার হাট। হাটের দিনে সূর্য ওঠার আগে থেকেই চারা বেচাকেনার হাট বসে। উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষকরা বিক্রির জন্য নৌকায় করে নিয়ে আসছে ধানের বীজতলা।

কৃষকেরা মাঠের পরিচর্যা করে চারা লাগাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মৌসুমের শুরুতে টানা বৃষ্টি, বৈরী আবহাওয়া ও বীজতলায় জলাবদ্ধতার কারণে অধিকাংশ কৃষক সময়মতো চারা উৎপাদন করতে পারেননি।

উপকূলজুড়ে আমন চারা মোকাবিলায় বিপন্ন কৃষক ছুটে আসে ভাসমান চারার হাটে। এ হাটে কয়েক লাখ টাকার আমন চারা বেচাকেনা হয়।

স্থানীয় কৃষকরা জানায়, কাউখালী অঞ্চলের কৃষি জমি আশপাশের জনপদের চেয়ে জমি উঁচু বলে এখানে জলাবদ্ধতা তেমন নেই। ফলে এখানকার কৃষি জমির বীজতলা অন্য এলাকার চেয়ে টিকে থাকে। এ কারণে অন্য এলাকার কৃষকরা আমন চারার সঙ্কট কাটাতে কাউখালীর এ ভাসমান বীজের হাটে আসে।

পিরোজপুর, বাগেরহাট, বরগুনা, ঝালকাঠিসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা এ হাটে বীজ কিনতে আসে। পরিবহন সুবিধার কারণে নৌকা ও ট্রলারে করে ব্যবসায়ীরা ও কৃষকরা এখানে বীজের হাটে আসে।

এই হাটে আমন ধানের চারা পোন (৮০ মুঠো) হিসেবে বিক্রি হয়। প্রতি পোন চারার মূল্য এক হাজার থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা বিক্রি হয়। এবছর চারা উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম অনেকটা কম বলে কৃষকরা জানান।

উপজেলার ডুমজুড়ি গ্রামের কৃষক আবুল কালাম জানান, গত বছরের চেয়ে এবছর বীজতলার চারার দাম কম, যে চারা গত বছর পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি করেছে ওই একই চারা এ বছর বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার টাকায়।

নাজিরপুর উপজেলার শ্রীলংকাঠি এলাকা থেকে চারা কিনতে আসা কৃষক আব্দুস সোবহান বলেন, আমন চাষের জন্য বীজতলা তৈরির বীজ-ধান সংগ্রহ করা, তা দিয়ে বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদনে বেশ সময় লাগে। তাই কৃষকেরা এই হাটে এসে প্রয়োজনীয় চারা কিনে নিয়ে জমিতে রোপণ করেন। এতে জমির মালিকদের অর্থ ও সময় দুটোই সাশ্রয় হয়।

চারা কিনতে আসা ঝালকাঠী জেলার রাজাপুর উপজেলার কৃষক মৃণাল কান্তি রায় বলেন, এখন ধানের জমি চাষ করতে শ্রমিক পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও তাদের দৈনিক মজুরি ছয় থেকে ৭০০ টাকা দিতে হয়। এত টাকা খরচ করে বীজতলা তৈরির চেয়ে চারা কিনে চাষাবাদ করলে খরচ অনেক কম হয়।

কাউখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোমা রানী দাস বলেন, এই এলাকার জমি একটু উঁচু ও নদীবেষ্টিত হওয়ায় পানি জমতে পারে না। তাই কম সময় একই জমি থেকে সর্বোচ্চ লাভের এটি একটি আধুনিক প্রযুক্তি। তাই এখানকার কৃষকেরা জমিতে কয়েকবার আমন ধানের চারার বীজতলা তৈরি করতে পারেন।

ইতোমধ্যে কাউখালী উপজেলার কৃষকরা প্রায় ২৫ লাখ টাকার আমন ধানের চারা বিক্রি করেছে। কাউখালী কৃষির একটি সম্ভাবনাময় দিক হলো ভাসমান বাজারে বীজতলা বিক্রি। এখানকার বীজ ভালো হওয়ায় কৃষকদের কাউখালীর আমন ধানের বীজতলার প্রতি আগ্রহ বেশি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার হালদার জানান, কাউখালীতে আশা করা যায় এই বীজতলা আরো ১৫ দিন বেচাকেন হবে। আমাদের প্রতি ইউনিয়নে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা করে যাচ্ছে। বর্তমানে যুবক শ্রেণিসহ সকল বয়সের লোকজন কৃষি কাজে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।