বরগুনার আমতলীতে নজরুল স্মৃতি সংসদ (এনএসএস) নামের বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কর্মকর্তা মো: জাকির হোসেন মোল্লা বিজয় দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের নামে চাঁদা আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে সেবা কল্যাণ, সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: সোহেল এমন অভিযোগ করেন।
এ সময় অভিযুক্ত চাঁদা আদায়কারীর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে তিনি উপজেলা প্রশাসনের কাজে জোর দাবি জানান।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, আমতলীতে উপজেলা সমবায় অফিসের নিবন্ধিত ৪৪টি সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি রয়েছে। এছাড়া মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির শতাধিক বেসরকারি সঞ্চয় ও ঋণদান সংস্থা আছে। এসব সংস্থার কাছ থেকে এনএসএস’র কমিউনিকেশন অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি কো-অর্ডিনেটর জাকির বিজয় দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের নামে চাঁদা আদায় করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি কর্তৃপক্ষ চাঁদা দিতে না চাইলে তাদের প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করছেন জাকির। এ সংস্থাগুলো থেকে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের নামে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করছেন। অথচ উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় চাঁদা আদায় করে তিনি নিজেই আত্মসাৎ করছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
ভুক্তভোগীরা বলেন, গত দুই বছর ধরে তিনি এভাবে চাঁদা আদায় করছেন। এতে সঞ্চয় ও ঋণদান কর্মসূচি সমিতি কর্তৃপক্ষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাকির হোসেন মোল্লা উপজেলা এনজিও ফোরামের সভাপতি দাবি করে একের পর এক চাঁদা আদায় করছেন। অথচ তিনি উপজেলা এনজিও ফোরামের কোনো পদে নেই। তার বিরুদ্ধে এনজিও ফোরামের নাম ব্যবহার করে নানাবিধ অপকর্ম করার অভিযোগও রয়েছে।
সেবা কল্যাণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: সোহেল অভিযোগ করে বলেন, ‘জাকির হোসেন মোল্লা উপজেলা প্রশাসনের নামে আমার কাছে দুই হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি তাকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করি। পরে তিনি আমাকে উপজেলা প্রশাসন ও মাইক্রোক্রেডিড রেগুলেটরি অথরটির ভয় দেখান।’
তিনি আরো বলেন, ‘জাকির গত বছরও উপজেলা প্রশাসনের নামে আমার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছেন। এছাড়া উপজেলার সব সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতির কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন।’
স্বদেশ সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতির সভাপতি জয় চন্দ্র মাঝি বলেন, ‘গত বছর আমার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছেন। এ বছর আবারো দুই হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছেন, কিন্তু আমি দেইনি।’
অভিযোগের বিষয়ে মো: জাকির হোসেন মোল্লার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে নিউজ করবা? করো, কোনো সমস্যা নেই।’ এরপর আর কোনো কথা না বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।
উপজেলা সমবায় অফিসের সহকারী পরিদর্শক মো: বাদল আকন বলেন, ‘সমবায় অফিসের নিবন্ধিত ৪৪টি সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি রয়েছে। সব সমিতি থেকে বিজয় দিবসের নামে জাকির চাঁদা আদায় করছেন মর্মে অভিযোগ পেয়েছি। আমার কাছে বেশ কয়েকজন এমন অভিযোগ দিয়েছেন। তার চাঁদা আদায়ের বিষয়ে উপজেলা সমবায় অফিস কিছুই জানে না। এভাবে যিনি চাঁদা আদায় করছেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন।’
এনএসএস’র নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দিন পান্না বলেন, ‘আমাদের সংস্থা থেকে জাকির হোসেনকে চাঁদা আদায়ের অনুমতি দেয়া হয়নি। যদি তিনি চাঁদা আদায় করে থাকেন, তা তার ব্যক্তিগত বিষয়।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের নামে এনজিও ও সঞ্চয়-ঋণদান সমিতির কাছ থেকে জাকির হোসেন মোল্লাকে চাঁদা উত্তোলন করতে অনুমতি দেয়া হয়নি। চাঁদা আদায়ের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’



