বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেছেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকার নির্বাচন আয়োজনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার বিরোধিতা করতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা চলছে। পরপর আগুন লাগার ঘটনাগুলো কী শুধুই দুর্ঘটনা? ঘটনাগুলো কেবল কাকতালীয় নয়, এগুলো জাতিকে ভাবিয়ে তুলছে। এ ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের পেছনে পরিকল্পিত নাশকতার গন্ধ রয়েছে। দেশের মানুষ আজ প্রশ্ন তুলছে এ ঘটনাগুলোর পেছনে কারা, কেনই বা হঠাৎ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের এমন পুনরাবৃত্তি ঘটছে? এগুলো পরিকল্পিত কোনো ষড়যন্ত্র কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার।’
বুধবার (২২ অক্টোবর) রাজশাহীর আড়ানী মনোমোহনী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামত কাঠামো ৩১ দফা বাস্তবায়ন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
আবদুস সালাম বলেন, ‘জনগণ যখন আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে ঠিক তখনই ইচ্ছাকৃতভাবে এসব ঘটনার মাধ্যমে জনগণের মাঝে ভয় ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা নির্বাচন বানচালের গভীর ষড়যন্ত্র।’
তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামত কাঠামো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ ৩১ দফা শুধু রাজনৈতিক ঘোষণা নয়, এটি একটি জাতীয় পুনর্গঠনের সুপরিকল্পিত নকশা। এতে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক সংস্কার, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা, দুর্নীতি দমন, জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করার দিকনির্দেশনা রয়েছে।’
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন আড়ানী পৌর বিএনপির সভাপতি তোজাম্মেল হক। আড়ানী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাাক আহমেদ বিল্টুর সঞ্চালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এদিকে জনসভা শুরুর আগে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, ‘জনগণ কখনো ভুল করে না, ভবিষ্যতেও করবে না। অতীতেও জনগণ ৬২, ৬৯, ৭০, ৭৫, ৯০ ও ২৪ সালেও ভুল করেনি। জনগণ যতবার স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পেরেছে, তারা বিএনপির পক্ষেই রায় দিয়েছে। কাজেই আমরা জনগণের ওপর আস্থা রেখেই নির্বাচনে যেতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব অর্পিত করাটাই এ সরকারের প্রধান কাজ। সেই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। জনগণ যদি বিএনপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে যায়, তারপরেও রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ৩১ দফা রূপরেখাকে সামনে রেখে সব দলকে সাথে নিয়ে সরকার পরিচালনা করব। বিএনপির ৩১ দফা রূপরেখা মূলত রাষ্ট্র পুনর্গঠন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও প্রশাসনিক সংস্কারের একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘এ ৩১ দফা হচ্ছে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার—যার মাধ্যমে আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক, জবাবদিহিমূলক ও মানবিক রাষ্ট্র গঠন করতে চাই। ৩১ দফার রূপরেখা শুধু বিএনপির রাজনৈতিক নথি নয়, এটি হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনের কর্মপরিকল্পনা। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া রাষ্ট্র পুনর্গঠন সম্ভব নয়।’
সরকারের দমননীতি ও বিএনপির অবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগ আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর দখল করেছে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল করেছে, গুম করেছে, হত্যা করেছে; তবুও তারেক রহমানের নির্দেশে তাদের নিরাপত্তাও আমরা দিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনেও জনগণ আমাদের পাশে থাকবে। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে বিএনপির পক্ষ থেকে শতভাগ সহযোগিতা থাকবে। যারা নির্বাচন পেছানোর কথা বলে তারা দেশের জন্য রাজনীতি করতে চায় না। আমরা চাই জনগণের ভোটের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সরকার প্রতিষ্ঠা হোক।’
এ সময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ, মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশাসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।