খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। পাঁচ বছর ধরে এ টাকা আত্মসাতের সাথে জড়িত সমিতির তৎকালীন সভাপতি ও খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: সাইফুল ইসলামসহ ওই আমলে সমিতির নেতৃত্বে থাকা আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মানিস্যুট করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বুধবার অনুষ্ঠিত সমিতির বিশেষ সাধারণ সভায়।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভায় এ বিষয়ক অডিট রিপোর্ট উপস্থাপন করেন সমিতির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট নূরুল হাসান রুবা।
সভায় সমিতির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া যায় জানতে চাইলে সাধারণ সদস্যরা সবাই মামলার ব্যাপারে সম্মতি দেন। এ সময় সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেকের প্রস্তাবে সিনিয়র সিভিল আইনজীবীদের দিয়ে ১১ সদস্যের প্যানেল করে মামলার আরজি লেখার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়।
সভা চলার সময় অর্থ আত্মসাতের নানান দেখে অনেকেই বিস্মিত হন। সমিতির নামে ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে কোটি কোটি টাকার লেনদেন যেমন করা হয়, তেমনি ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে অসামঞ্জস্য লেনদেন এমনকি কারণ ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত ছাড়াই নামে-বেনামে টাকা আত্মসাতের চিত্র ফুটে ওঠে।
অন্যদিকে ব্যাংক হিসাব থেকে ৫ আগস্টের সরকার পরিবর্তনের দিন এবং পরদিনও (৬ আগস্ট) টাকা উত্তোলনের প্রমাণ মেলে। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্তকার অডিটে এমন তথ্যসম্বলিত অডিটের বিস্তারিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। ৭৮ পৃষ্ঠার অডিট প্রতিবেদনে ২৬ দফা অনিয়মের বিস্তারিত তুলে ধরে বলা হয়, গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন, ভুয়া বিল, অনুমোদনবিহীন বিনিয়োগ এবং ব্যক্তিগত ঋণের নামে সমিতির তহবিল থেকে মোট ২৪ কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৯ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
অডিটে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, এফডিআর ও ডিপিএস বিনিয়োগে অনিয়ম। নির্বাহী পরিষদের অনুমোদন ছাড়া একাধিক এফডিআর ভেঙে নগদ উত্তোলন এবং নতুন এফডিআর খোলা হয়েছে। যার কোনোটির নথি নেই। কয়েকজন সাধারণ সদস্য ও কর্মকর্তা ব্যক্তিগত কাজে কয়েক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু ফেরতের কোনো প্রমাণ নেই।
অফিস রক্ষণাবেক্ষণের নামে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাংগঠনিক কার্যক্রম ও নির্মাণকাজের জন্য ভুয়া বিল তৈরি এবং বাজার দরের তুলনায় অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের প্রমাণ মিলেছে।
গঠনতন্ত্রবিরোধী ব্যয়ও হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রাথমিক হিসাবে অনিয়মের আর্থিক পরিমাণ ২৪ কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৯ টাকা হলেও অডিট টিম জানিয়েছে, লুকানো বা অসম্পূর্ণ নথি পরীক্ষা করলে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।