দীর্ঘ ৫ মাস পর যাদুকাটা নদী-ফাজিলপুর কোয়ারি চালু, ৫০ হাজার শ্রমিকের ঈদআনন্দ

বালু শ্রমিক জাকির হোসেন বলেন, নদী চালু হওয়ায় উপার্জন করে ভালোভাবেই চলতে পারবো। আমাদের খেয়ে না খেয়ে দিন পার করার সময় শেষ হয়েছে।

মেহেদী হাসান ভূঁইয়া, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)

Location :

Tahirpur
দীর্ঘ ৫ মাস পর যাদুকাটা নদী-ফাজিলপুর কোয়ারি চালু
দীর্ঘ ৫ মাস পর যাদুকাটা নদী-ফাজিলপুর কোয়ারি চালু |ছবি : নয়া দিগন্ত

দীর্ঘ ৫ মাস পর আদালতের রায়ে সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ও ফাজিলপুর কোয়ারি চালু হওয়ায় কর্মহীন ৫০ হাজার শ্রমিকের মধ্যে ঈদের আনন্দ বইছে। একইসাথে নদী ও কোয়ারি সংশ্লিষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত ইজারাদার, ব্যবসায়ীদের মধ্যেও স্বস্তি ফিরেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ মাস ধরে (১৪ এপ্রিল-১০ সেপ্টেম্বর) আদালতে মামলা জটিলতার কারণে বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। এ কারণে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ৫০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেন।

শুধু শ্রমিকই নয়, চরম ক্ষতির মুখে পড়েন নদী-নির্ভর স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরাও। এ ছাড়াও এই নদী সংশ্লিষ্ট ফাজিলপুর টুলট্যাক্স, রয়েলিটি ইজারা আনা ইজারাদারগণ, যন্ত্রচালিত নৌকা, পরিবহন খরচ, খাদ্য, চিকিৎসা সব কিছুতেই টান পড়ে।

নদীটি খুলে দেয়ার পর যাদুকাটা নদীর পাড়ের বাসিন্দা ও শ্রমিকরা জানান, গত ৫ মাস ধরে নদীতে কোনো কাজ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে দিন পার করেছেন তারা। নদীটি চালু হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে, নদী খুলে দেয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন হাজার হাজার শ্রমিক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী যাদুকাটা নদী ও ফাজিলপুর কোয়ারি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় যুগের পর যুগ সনাতন পদ্ধতিতে বালু তোলার কাজ করে জীবিকা নির্ভর নদী পাড়ের শ্রমিকরা পরিবার পরিজন নিয়ে দিশেহারা ছিলেন। বিকল্প কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় ঘরের খাবার জোটাতেই অনেকের বেগ পেতে হয়। অনেকেই খাবার জোগাড় করতে না পারায় কাজের সন্ধানে এলাকা ছেড়ে চলে যান। গেলো ৫ মাস ধরে নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকায় কর্মহীন ছিলেন নদী পাড়ের ৫০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক। ফলে নদী খুলে দিয়ে কাজের সুযোগ করে দিতে নদী পাড়ে মানববন্ধন করেছিলেন হাজারো শ্রমিক।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ মেয়াদে যাদুকাটা ১ এবং যাদুকাটা ২ নামের দুটি বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে যাদুকাটা ১ ইজারা নেন তাহিয়া স্টোন ক্রাশারের মালিক নাসির মিয়া (৩৩ কোটি টাকা) এবং যাদুকাটা ২ ইজারা নেন মেসার্স জিনান এন্টারপ্রাইজের মালিক মো: রুবেল মিয়া (৫৫ কোটি টাকা)। তবে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট ছয় মাসের জন্য ইজারা কার্যক্রম স্থগিত করেন।

নদীর পাড়ের বাসিন্দা জহির মিয়া বলেন, নদী থেমে গেলে আমার মতো হাজারো শ্রমিকের জীবিকার চাকা থেমে যায়। গত ৫ মাস খাবার সংগ্রহ করাই কষ্টের ছিল শ্রমিকদের। এখন নদী খুলে দেয়ায় সেই দুঃখের দিন শেষ হয়েছে। কাজ করে টাকা উপার্জন করতে পারবো আর ছেলে মেয়ে নিয়ে চলতে পারবো।

বালু শ্রমিক জাকির হোসেন বলেন, নদী চালু হওয়ায় উপার্জন করে ভালোভাবেই চলতে পারবো। আমাদের খেয়ে না খেয়ে দিন পার করার সময় শেষ হয়েছে।

ফাজিলপুর নৌকা ঘাটের ইজারাদার জবা মিয়া জানান, দীর্ঘদিন বালু পরিবহন বন্ধ থাকায় আমরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছি। আজ যাদুকাটা নদী চালু হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে, সবাই খুশি।

যাদুকাটা নদীর ইজারাদার মো: নাসির মিয়া বলেন, যাদুকাটা নদী সরকারের রাজস্ব আদায়ের বড় একটি খাত, নদীটি ইজারা নেয়ার পর থেকে বন্ধ থাকায় এ বছর আমাদের কয়েক কোটি টাকা লোকসান হবে। চালু হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছি আর শ্রমিকরাও কাজ করতে পারবেন।

সুনামগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম (রাজস্ব) জানান, আদালতের নির্দেশনা মেনে যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলনের কাজ নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে চলবে।