লালমনিরহাটের নয়টি হিমাগারে ৭৮ হাজার মেট্রিক টন আলু অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। সরকার হিমাগারের গেটে আলুর দাম কেজি প্রতি ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও কৃষকরা পাচ্ছেন মাত্র ১২ থেকে ১৩ টাকা।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে সাত হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে দুই লাখ চার হাজার মেট্রিক টন। জেলার নয়টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে ৭৮ হাজার মেট্রিক টন। যার আর্থিক মূল্যই প্রায় ১০৬ কোটি টাকার মত।
জানা গেছে, লালমনিরহাটের বিভিন্ন হিমাগারগুলোতে বিপুল পরিমাণ অবিক্রিত আলু পড়ে আছে। এবারে আলু উৎপাদন বেশি হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকরা আশানুরূপ দাম পাননি। অথচ আর দেড় মাস পর নতুন আলু রোপণের মৌসুম শুরু হবে।
এমন অবস্থায় বিপুল পরিমাণ আলু এখনই বিক্রি করতে না পারলে তা খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ার পাশাপাশি চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে সরকার হিমাগারের গেটে আলুর দাম কেজি প্রতি ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও খুচরা বাজারে মাত্র ১৪ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। তবে কৃষকরা পাইকারি হিসেবে হিমাগারে ১২ থেকে ১৩ টাকা দরে বেশি আলু বিক্রি হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে।
স্থানীয় আলু চাষী এরশাদুল হক বলেন, ‘৬০ কেজির এক বস্তা আলু উৎপাদন খরচ ও ভাড়া মিলে দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় হাজার টাকা। এতে এক কেজি আলু দাম হয় ২৫ টাকা। সরকার প্রতি কেজি ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও আমরা হিমাগারে পাইকারি দরে ১২ থেকে ১৩ টাকা বিক্রি করছি। ফলে প্রতি কেজি আলুতে ১২ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।’
আলু ব্যবসায়ী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আলুর দাম বাড়লে সরকারি সংস্থাগুলো দাম নিয়ন্ত্রণ করতে নামে। কিন্তু দাম পড়ে গেলে কারো কোনো খোঁজ থাকে না। খুচরা বা পাইকারি ২২ টাকা কেজিতে কেউ আলু কিনছেন না। পাইকারি দরে ১২ থেকে ১৩ টাকায় কিনছি আর খুচরা বাজারে ১৩ থেকে ১৪ টাকায় আলু বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে এক টাকা লাভ করছি।’
তিস্তা হিমাগারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোখছেদুর রহমান জানান, বাজারে আলুর দাম কম থাকায় হিমাগার থেকে কৃষকরা আলু তুলতে আসছেন না। অথচ গত বছর আগস্টে ৫০ থেকে ৬০ হাজার বস্তা আলু বের হয়েছিল। এবার মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার বস্তা আলু বের হয়েছে।
লালমনিরহাট কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো: হারুনুর রশিদ বলেন, কৃষকরা আলুর ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সাইখুল আরেফিন বলেন, চলতি মৌসুমে আলু উৎপাদন হয়েছে দুই লাখ চার হাজার মেট্রিক টন। এরমধ্যে ৭৮ হাজার মেট্রিক টন আলু হিমাগারে মজুদ আছে। সঠিক সময় আলু বিক্রি না হলে চাষিরা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।