পাহাড়ের ঘুমন্ত অর্থনীতি জাগাতে বিশেষ বরাদ্দ ও পরিকল্পনা জরুরি

কৃষি, মৎস্য, পর্যটন ও প্রাণিসম্পদের অপার সম্ভাবনা

সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে এই চার খাতকে কেন্দ্র করেই পার্বত্যাঞ্চলের অর্থনীতিকে বহুগুণ শক্তিশালী করা সম্ভব।

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

Location :

Rangamati
কাপ্তাই হ্রদে নৌকায় জেলেরা
কাপ্তাই হ্রদে নৌকায় জেলেরা |নয়া দিগন্ত

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- এই তিন পার্বত্য জেলা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এক অপার সম্ভাবনাময় অঞ্চল। কৃষি, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য ও পর্যটন খাতের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও, উপযুক্ত পরিকল্পনা, বিশেষ বরাদ্দ এবং সরকারিভাবে যথাযথ উদ্যোগের অভাবে এই অঞ্চলের অর্থনীতি তার পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছে না।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা মনে করছেন, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে এই চার খাতকে কেন্দ্র করেই পার্বত্যাঞ্চলের অর্থনীতিকে বহুগুণ শক্তিশালী করা সম্ভব।

ঐতিহ্যগতভাবে জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল হলেও, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষি চিত্রে এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। ফলজ বাগানের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাঙ্গামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় এখন আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু ও আনারসের মতো নানা মৌসুমি ফলের ব্যাপক উৎপাদন হচ্ছে। তবে ফল সংরক্ষণাগার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার অভাবে উৎপাদিত ফলের একটি বড় অংশ নষ্ট হচ্ছে এবং সম্ভাবনার পুরোটা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

স্থানীয় কৃষক ও উদ্যোক্তারা বলছেন, শুধু মৌসুমি ফল উৎপাদনকে কেন্দ্র করেই এই তিন জেলায় কয়েক হাজার কোটি টাকার বাজার সৃষ্টি করা সম্ভব, যার জন্য জরুরি ফল সংরক্ষণাগার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন।

রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের মাছ দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে পরিচিত। এই হ্রদ দেশের মৎস্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু ১৯৬০ সালের পর থেকে হ্রদে কোনো ড্রেজিং না হওয়ায় এটি ক্রমশ ভরাট হয়ে পড়ছে। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে নৌ-যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয়দের মতে, কাপ্তাই হ্রদে দ্রুত ড্রেজিং করা না হলে ভবিষ্যতে মৎস্য উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি এই অঞ্চলের নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনধারা পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটনকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে এটি একটি পছন্দের গন্তব্য হতে পারে। তবে বিনিয়োগের অভাব এবং ব্যাংক ঋণের সীমাবদ্ধতায় এ খাতটি আশানুরূপভাবে বিকশিত হতে পারছে না।

উদ্যোক্তারা অভিযোগ করছেন, পার্বত্যাঞ্চলে দুই কোটি টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ দেয়া হয় না এবং তাও কঠিন শর্তে। তারা মনে করেন, সহজ শর্তে বেশি পরিমাণে ঋণ সুবিধা প্রদান করা হলে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে এবং স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান বাড়বে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, সমতলের সাথে পার্বত্যাঞ্চলের ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক পার্থক্য অনেক। এখানে শিল্প-কারখানা তুলনামূলকভাবে কম এবং পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তার অভাব রয়েছে। তাই কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও পর্যটন- এই চার খাতে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে অঞ্চলটির সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।

তাদের মতে, পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে কৃষি ও পর্যটনসহ সম্ভাবনাময় খাতে বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চলে রূপান্তরিত হতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন দ্রুত সরকারি পদক্ষেপ, সহজ ঋণ সুবিধা এবং স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ।