টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেকের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় গত তিন দিন ধরে পানিবন্দী রয়েছে রাঙ্গামাটির সাতটি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
কাপ্তাই লেকের পানির চাপ কমাতে কাপ্তাই বাধেঁর পানি ছাড়া অব্যাহত রয়েছে। কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে পানির উচ্চতা রয়েছে ১০৮ দশমিক ৭০ ফুট মিনস সী লেভেল। ১৬টি জলকপাট সাড়ে তিন ফুট খুলে সেকেন্ডে ৬৮ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলীতে ছাড়া হচ্ছে।
এদিকে, কর্ণফুলী নদীতে পানির স্রোতের তীব্রতা বাড়ায় রাঙ্গামাটি-বান্দবান সড়কে দ্বিতীয় দিনের মতো চন্দ্রঘোনা ফেরী চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফেরী চলাচল বন্ধ থাকায় বান্দরবান-রাঙ্গমাটির সড়কসহ রাজস্থলী, কাপ্তাই ও রাঙ্গুনিয়ার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়া হলেও বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেকের পানি বিপৎসীমায় রয়েছে। ফলে হ্রদ তীরবর্তী ও পাহাড়ের নিম্নঞ্চলের ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি ডুবে যাওয়ায় ওইসব এলাকার মানুষেরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
স্থানীয় প্রশাসন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের আশ্রয়ের জন্য ২৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ রাঙ্গামাটির উপ-পরিচালক মো: মোবারক হোসেন বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হয়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাঙ্গামাটি জেলা শহরের শান্তিনগর, রসূলপুর, ব্রাক্ষণটিলা, পৌর কলোনী, আসামবস্তি, ব্রাক্ষণটিলা, পাবলিক হেলথ এলাকা হ্রদের পানিতে তলিয়ে গেছে।
বাঘাইছড়ির উপজেলার রূপকারী ইউনিয়ন, মাস্টারপাড়া, মধ্যম পাড়া, হাজী পাড়া, মাদরাসা পাড়া, এফ ব্লক, বটতলী, আমতলী ইউনিয়নসহ তৎসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল হ্রদের পানিতে ডুবে গেছে।
বৃহস্পতিবার থেকে সেনাবাহিনী সাজেকের বাঘাইহাট এলাকায় বন্যাদুর্গম অর্ধশতাধিক মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে। পাশাপাশি বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের খাবার বিতরণ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
লংগদু উপজেলার ঝরণা টিলা, ভাসাইন্যাদম ইউনিয়ন, বগাচত্ত্বর ইউনিয়নের জালিয়া পাড়া, গুলশাখালী ইউনিয়নের সোনাগাঁও পাড়া, মাইনী ইউনিয়নের এফআইডিসি বড় কলোনি, বিলাইড়ি উপজেলা সদর, ধূপ্পারছড়, বহলতলী, বাঙ্গালকাটা এলাকাসহ নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, জুড়াছড়ি উপজেলা, কাপ্তাই উপজেলা এবং নানিয়ারচর উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকা হ্রদের পানিতে তলিয়ে গেছে।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাঙ্গামাটি সদর, নানিয়ারচর, লংগদু এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন এবং রাঙামাটি ও বাঘাইছড়ি পৌরসভা মিলে মোট ৮১টি গ্রামের বাসিন্দারা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং দুই হাজার কেজি চাল বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যার্তদের সহায়তায় ২৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে খোলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাঙ্গামাটি, নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, লংগদু উপজেলা বন্যায় ৯৮ হাজার হেক্টর ফসলি জমি, ৪৩টি পুকুর, ৬১টি সড়ক এবং ৯টি হাটবাজার হ্রদের পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।