পাহাড় আর হাওর পরিবেষ্টিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। একের পর এক অজগর উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক, কৌতূহল ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ধানক্ষেতে ২৫ কেজি ওজনের বিশাল অজগর উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হাইল হাওরে মাছ ধরার জালে ধরা পড়ে আরেকটি ৫ ফুট লম্বা অজগর। দুই স্থানে পরপর অজগরের উপস্থিতি স্থানীয়দের মধ্যে বিস্ময় ছড়িয়েছে। তবে পরিবেশকর্মীরা বলছেন, এর পেছনে বনাঞ্চলের পরিবর্তন ও খাদ্যাভাবের সম্ভাব্য প্রভাব রয়েছে।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৮টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও ফকিরবাড়ি সংলগ্ন ধানক্ষেতে শ্রমিকরা ধান কাটার সময় বিশাল আকৃতির এ অজগরটি দেখতে পান।
জানা যায়, আনুমানিক ১০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং প্রায় ২৫ কেজি ওজনের সাপটি দেখে শ্রমিকরা আতঙ্কে কাজ বন্ধ করে দেন। পরে শ্রমিকরা বিষয়টি স্থানীয়দের জানালে তারা বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজলকে জানায়। খবর পেয়ে সজল পরিবেশকর্মী রাজদীপ দেব দীপ ও রিদন গৌড়কে সাথে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অক্ষত অবস্থায় সাপটিকে উদ্ধার করেন।
ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে সদর ইউনিয়নের ইছবপুর ও নোয়াগাঁও এলাকা থেকে আরো তিনটি অজগর উদ্ধার করা হয়। পরে সেগুলোকে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে একই দিন দুপুর দেড়টার দিকে শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের ভুবন বেরী এলাকায় মাছ ধরার জাল তুলতে গিয়ে আঁতকে ওঠেন জেলেরা। জালের ভেতর শক্তভাবে জড়িয়ে রয়েছে ৫ ফুট লম্বা এক অজগর। যার আনুমানিক ওজন ৬-৭ কেজি।
ঘটনায় ভুবন বেরীর মালিক খাজা মিয়া দ্রুত বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনকে খবর দেন। স্বপন দেব সজল ও রাজদীপ দেব দীপ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাপটি উদ্ধার করেন।
দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর অবশেষে অজগরটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় এবং পরে শ্রীমঙ্গল বন বিভাগের রেঞ্জ কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়।
এ বিষয়ে সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল বলেন, ‘মানুষের নিরাপত্তা ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এ দুই দায়িত্ব মাথায় রেখেই আমরা কাজ করি। ধানক্ষেতের অজগরটি সুস্থ ছিল এবং খুব সতর্কভাবে সেটিকে উদ্ধার করেছি।’
রাজদীপ দেব দীপ বলেন, ‘হাওর থেকে উদ্ধার করা সাপটি জালের প্রতিটি ফাঁসের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ছিল। একটু ভুল করলেই সাপটির ক্ষতি হতে পারত। অনেক ধৈর্য নিয়ে টুকরো টুকরো করে জাল কেটে অজগরটিকে বাঁচাতে হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা বাড়লেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সঠিক সময়ে কর্তৃপক্ষকে খবর দিলেই অজগরসহ বন্যপ্রাণী নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব।’
এদিকে এক সপ্তাহে একই এলাকায় ইছবপুর-নোয়াগাঁও ও হাইল হাওর মিলিয়ে মোট পাঁচটি অজগর উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শীত মৌসুমে খাদ্যের সন্ধান, আবাসস্থলের সংকোচন ও বনাঞ্চলের পরিবর্তনের কারণে অজগরগুলো লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।
স্থানীয়রা পরপর অজগর উদ্ধারের ঘটনায় বিস্মিত হলেও বন্যপ্রাণী সেবার তৎপরতায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
বন বিভাগ জানিয়েছে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে উদ্ধার হওয়া অজগরগুলোকে উপযুক্ত বনে অবমুক্ত করা হবে।



