রংপুরে আখতার হোসেন

গুম-খুনের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে

‘গত ১৬ বছরে গুম ও খুনের সাথে যারা জড়িত ছিলেন। তারা বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে কাজ করেন নাই তারা একটা দল, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য সফল করতে কাজ করেছেন।’

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur
রংপুরে আখতার হোসেন
রংপুরে আখতার হোসেন |নয়া দিগন্ত

জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ‘গত ১৬ বছরে গুম ও খুনের সাথে যারা জড়িত ছিলেন। তারা বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে কাজ করেন নাই তারা একটা দল, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য সফল করতে যারা কাজ করেছেন। বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে এই আওয়ামী লীগ। এই গুম ও খুনের সাথে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ডিজিএফআই, র‌্যাবসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের অনেক সিনিয়র কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল অপরাধ তাদের অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। যেসব জেনারেল, ডিজিএফআই, র‍্যাব এবং সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা বাংলাদেশের মানুষকে গুম করেছে খুন করেছে, আয়না ঘরে বন্দি করেছে।’ জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে তাদেরকে অতিসত্বর গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাই।

শনিবার (১১ অক্টোবর) বেলা ৩টার দিকে রংপুর জেলা বিএনপির প্রয়াত সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুর কবর জিয়ারত এবং তার পরিবারের সাথে দেখা করার পর সাংবাদিকদের সাথে আলাপের সময় এসব কথা বলেন তিনি।

এ সময়ে তার সাথে ছিলেন- এনসিপির রংপুর জেলা প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল্লাহ আল গালিব, প্রথম যুগ্ম সমন্বয়ক এরশাদ হোসেন, মহানগর প্রথম যুগ্ম সমন্বয়ক আলমগীর নয়নসহ এনসিপির নেতৃবৃন্দ। এর আগে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছালে এনসিপি নেতাকর্মীরা তাকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা দিয়ে নগরীর শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে সংবর্ধনা দেয় নেতা কর্মীরা।

সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে আখতার হোসেন বলেন, ‘শুধু যেনতেনভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করার মধ্য দিয়ে উপদেষ্টারা যারা এই সরকার গঠন করেছেন তাদের দায়মুক্তি সম্ভব নয়। এই দায়িত্ব থেকে পলায়নপর মানসিকতা নিয়ে তারা শুধু ক্ষমতা হস্তান্তর করে দিয়ে বেঁচে যাবেন ব্যাপারটা এমন নয়।’

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কিছু দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। সংস্কারকে বাস্তব, বিচার প্রক্রিয়াকে একটা দৃশ্যমান পর্যায়ে উপনীত করা, এবং সত্যিকারের একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের দীর্ঘ সময়ের কার্যকলাপ দেখে মনে হয় যে তারা শুধুমাত্র ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারলেই তারা বেঁচে যান। যেনতেন করে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ‘সেফ এক্সিট’ নেয়ার যে মানসিকতা সেই জায়গাটাতে পরিবর্তন যাতে আসে যাতে করে জনগণ তাদেরকে যে দায়িত্বের জন্য সেখানে অধিষ্ঠিত করেছেন। সেই দায়িত্বে কোনো ধরনের ফাঁকিবাজি তৈরি না হয়। এই দায়িত্বটাকে তারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করেন। এবং এই দায়িত্বগুলো থেকে পলায়ন পর মানসিকতা সেফ এক্সিট নিয়ে তারা শুধু ক্ষমতা হস্তান্তর করে দিয়ে বেঁচে যাবেন ব্যাপারটা এমন নয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদকে অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে ম্যান্ডেট প্রাপ্ত হয়েছেন সেই সব কিছুকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই তারা সেফ এক্সিট পেতে পারেন, অন্য কোনোভাবে নয়।’

আখতার বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য, বাংলাদেশকে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের সেনাবাহিনী যে প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের অংশ এই প্রতিষ্ঠানকে যারা নষ্ট করার জন্য কাজ করেছে, এই প্রতিষ্ঠানকে যারা হাসিনার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। গুম করেছে তারা বাংলাদেশের শত্রু বাংলাদেশের মানুষের শত্রু, তাদের সাথে আমাদের কোনো আপোষের জায়গা নেই। কিন্তু বাহিনী হিসেবে সেনাবাহিনীর অনেক সদস্যরাই জুনিয়র অফিসাররা জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ে ছাত্র জনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তাদেরকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।’

এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীগুলোকে জনগণের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হলে যারা অপরাধী তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। যারা বাংলাদেশের পক্ষের জেনারেল আছেন, অফিসার আছেন, এই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ অন্য আইন শৃঙ্খলার প্রতিষ্ঠান আছে তাদেরকে দায়িত্ব দিতে হবে।’

আখতার আরো বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সদস্যরা এবং সাধারণ মানুষকে যারা বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করতেন গুম কর হতো, খুন করা হতো আয়না ঘরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হতো বছরের পর বছর পরিবার থেকে দূরে রাখা হতো। তাদেরকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করা হয়েছিল।’

পরে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন পীরগাছা ও কাউনিয়ার উদ্দেশ্যে রংপুর ত্যাগ করেন।